আবাদি জমিতে চলছে অবাধে পুকুর খনন, মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়
- প্রকাশের সময় : ০৮:৪৭:১৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৪
- / ১৬৫ বার পড়া হয়েছে
মো. আলমগীর খন্দকার, নবীনগর: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে দালালদের প্রলোভনে ফসলি জমির উপরিভাগের উর্বর মাটি যাচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়। তাছাড়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ভেকু দ্বারা গভীর গর্ত করে মাটি কাটার ফলে ফসলি জমি পুকুরে পরিণত হচ্ছে। এতে যেমন ফসলি জমির আবাদ পড়েছে হুমকির মুখে ঠিক তেমনি হ্রাস পাচ্ছে ফসলি জমির পরিমাণ। প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব ঘটলেও দেখার যেনো কেউ নেই।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নাটঘর, বড়াইল, বিদ্যাকুট, কাইতলা উত্তর, রসুল্লাবাদ, বড়িকান্দি, শিবপুর, শ্রীরামপুর, জিনদপুর, বিটঘর, লাউর ফতেপুর, সাতমোড়া, শ্যামগ্রাম, নবীনগর পশ্চিম ইউনিয়নসহ একাধিক গ্রামে ফসলি জমির উপরিভাগের উর্বর মাটি অর্থাৎ (টপসয়েল) বিক্রি হচ্ছে ইটভাটায়।
এছাড়াও উপজেলার সেমন্তঘর, কাইতলা,কাজালিয়া, সোনাবালুয়া, আহমদপুর, ফতেহপুর, টানচারা, হাজীপুর, বাশারুক, ইসলামপুর, ভিটিভিশারা, রছুল্লাবাদ, নোয়াগ্রাম সহ একাধিক গ্রামে ফসলি জমিতে চলছে অবাধে মাটি বিক্রি ও পুকুর খনন। অভিযোগ রয়েছে, অবৈধ ড্রেজার ও মাটি ব্যবসায়ীরা স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় ভূমি অফিসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে চালিয়ে যাচ্ছে এসব অপকর্ম। তাই অভিযোগ করলেও মিলেছে না কোন প্রতিকার। তাছাড়া মাটিবাহী মাহিন্দ্র গাড়ি ও ট্রাক্টর চলাচলের জন্য জমির মাঝখান দিয়ে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। মাটি ভর্তি এসব অবৈধ ট্রাক্টর ট্রলির ভারী চাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কাঁচা পাকা সড়ক। মূলত চাষাবাদের জন্য ব্যবহৃত প্রযুক্তিটি নানা পরিবহনে রূপান্তরিত হয়ে অদক্ষ ড্রাইভার ও শিশু-কিশোরদের দিয়ে অবাধে এসব যানবাহন বেপরোয়াভাবে চালানো হচ্ছে। রাস্তায় মাটি ভর্তি একাধিক গাড়ি একটানা চলার কারণে ধুলাবালি ও কানফাটা আওয়াজে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে স্কুল কলেজগামী ছাত্র-ছাত্রীসহ পথচারীরা।
কথা হয় উপজেলা রসুলাবাদ গ্রামের ড্রেজার ব্যবসায়ী বিল্লাল মিয়ার সাথে তিনি প্রতিদিনের পোস্টকে জানান আমি আমার ১৮ কানি ফসলি জমি থেকেই ড্রেজার দিয়ে মাটি কেটে বিক্রি করে থাকি আমি কখনো অন্যের জমির মাটি কাটি না। গত কিছুদিন হলো মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে আমার ড্রেজার গুলো প্রশাসনের লোকজন নিয়ে গেছে।
কথা হয় উপজেলার শ্যামগ্রাম ইউনিয়নের নাসিরাবাদ গ্রামের জমির মালিক হাসানের সাথে তিনি প্রতিদিনের পোস্টকে জানান, জমি আবাদের চেয়ে পুকুর চাষে বেশি লাভজনক তাই পুকুর খনন করছি। পুকুর খনন করতে প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে কোন অনুমতি নেননি বলেই জানান তিনি।
শিবপুর ইউনিয়ন কনিকারা গ্রামের আব্দুল মান্নান প্রতিদিনের পোস্টকে জানান, ৩-৪ বছর যাবত জমিটির মাটি সমান না হওয়ায় আবাদ করতে পারছিনা। তাই জমির মাটি কেটে সমান করছি। জমির মাটি ইট ভাটায় নিয়ে যাচ্ছে তাদের কাছ থেকে কোন টাকা পাচ্ছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান তারা নিজ দায়িত্বে জমি থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে এতে আমরা কোনো টাকা পাচ্ছি না।
পৌর এলাকার পূর্ব পাড়ার কৃষক শাহ আলম মিয়া প্রতিদিনের পোস্টকে জানান এলাকার কিছু প্রভাবশালী আইনের তোয়াক্কা না করেই এক্সক্যাভেটর ও ড্রেজার দিয়ে ফসলি জমি ধ্বংস করে অবাধে চালিয়ে যাচ্ছে মাটি বিক্রির রমরমা ব্যবসা তাছাড়া দালালরা জমির মালিকদের অতিরিক্ত টাকার লোভ দেখিয়ে জমির উপরিভাগের মাটি নিয়ে যাচ্ছে ইটভাটায়।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আবু কাশেম প্রতিদিনের পোস্টকে জানান, জমির শ্রেণি পরিবর্তন করার জন্য ডিসি বরাবর আবেদন করতে হয়। জমির শ্রেণি পরিবর্তন কেবলমাত্র ডিসি স্যার করতে পারে। তাছাড়া পুকুর উন্নয়ন আইন ১৯৩৯ তার পরবর্তী যে আইন গুলো আছে সেই অনুযায়ী এমন জমি নির্বাচন করতে হয় যেই জমিতে কৃষি অথবা তিন ফসলি জমির ক্ষতি হয় না। জলাবদ্ধতা হওয়ার আশঙ্কা থাকে না, তখন মাছ চাষের জন্য পুকুর কাটা যেতে পারে। হাতে মাটি কাটা অথবা ভেকুর মাধ্যমে মাটি কাটার অনুমতি দেওয়া হয়ে থাকে তবে এই মাটি ড্রেজার দিয়ে কাটা যাবে না এবং অন্যত্র বিক্রিও করা যাবে না এই মাটি দিয়ে কেবলমাত্র পুকুরের পাড় তৈরি করতে হবে। পুকুর খনন করার জন্য সাধারণত ৬-৭ ফিট গভীরতা এবং তলাটা হবে সমান এইভাবে পুকুর খনন করার নিয়ম রয়েছে। এর বেশি খনন করলে মাটি বিক্রি বা অন্য কোন অসৎ উদ্দেশ্যের জন্য এটি করা হয়।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো: জাহাঙ্গীর আলম লিটন প্রতিদিনের পোস্টকে জানান, ফসলি জমির প্রাণ বলা হয় টপ সয়েলকে। জমির প্রথম ৮ থেকে ১০ ইঞ্চিকে বলা হয় টপ সয়েল, এখানে থাকে মাটির জৈব পদার্থ। টপ সয়েল কর্তন করা হলে ঐ জমি উর্বরতা শক্তি হারায় এবং দীর্ঘমেয়াদে উৎপাদনশীলতা কমিয়ে দেয়।
নবীনগর পৌর মেয়র এডভোকেট শিব সংকর দাস প্রতিদিনের পোস্টকে জানান, আবাদি জমির মাটি কিছুতেই অন্যত্র বিক্রি করা যাবে না। এতে জমির উর্বরতা নষ্ট হয়ে যায়। ফসলি জমির মাটি কাটা থেকে বিরত থাকার জন্য সকলকে আহবান করেন।
এ বিষয়ে নবীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর ফরহাদ শামীম প্রতিদিনের পোস্টকে জানান, জেলা প্রশাসকের অনুমতি ব্যতীত কোন ব্যক্তি জমির শ্রেণী পরিবর্তন কিংবা জমির উপরিভাগের উর্বর মাটি অন্যত্র বিক্রি করতে পারেন না। এই নিয়মের বাইরে গিয়ে যদি কেউ জমির মাটি কাটে বা বিক্রি করেন তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।