০৯:০৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ মার্চ ২০২৩, ৮ চৈত্র ১৪২৯ বঙ্গাব্দ

“টাকা না দেওয়ায় পরীক্ষার হলে ২ ছাত্রীকে পেটালেন শিক্ষক”

  • Khalid Hasan Ripu
  • আপডেট : ০৫:০৯:০৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ নভেম্বর ২০২২
  • ৭৭ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিদিনের পোস্ট || টাকা না দেওয়ায় পরীক্ষার হলে ২ ছাত্রীকে পেটালেন শিক্ষক|

লক্ষ্মীপুরে পরীক্ষার হলে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ফাতেমা আক্তার মীম ও নুহা আক্তারকে মারধরের পর খামছি দিয়ে জখম করার অভিযোগ উঠেছে। লক্ষ্মীপুর দারুল উলুম কামিল মাদ্রাসার (আলিয়া মাদ্রাসা) বাংলা শিক্ষক সালমা আক্তারের কাছে প্রাইভেট পড়ার টাকা না দেওয়ায় তিনি এ ঘটনা ঘটিয়েছেন।

মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) বিকালে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমরান হোসেন ও সদর থানায় এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ করেন ফাতেমা। এর আগে সকালে মাদ্রাসায় পরীক্ষা চলাকালে ওই শিক্ষক দুই ছাত্রীকে পিটিয়েছেন।

ভুক্তভোগী ফাতেমা মাদ্রাসার নবম শ্রেণির ছাত্রী ও নুহা ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। ফাতেমা সদর উপজেলার পার্বতীনগর ইউনিয়নের পার্বতীনগর গ্রামের দুলাল হোসেনের মেয়ে। তার মুখে শিক্ষকের খামছি দেওয়া আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এছাড়া নুহা একই মাদ্রাসার ইবতেদায়ি শিক্ষক খবির উদ্দিনের মেয়ে। তাদের সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

মাদ্রাসার শিক্ষক ও ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফাতেমা এক সময় সালমার কাছে বাংলা বিষয়ে প্রাইভেট পড়ত। তখন ১০ দিন পড়েই ফাতেমা আর পড়তে যায়নি। তবে ওই ১০ দিনের টাকা দিতে চেয়েছিল সে, কিন্তু শিক্ষক টাকা নেননি।

মঙ্গলবার সকালে ফাতেমা হাদিস বিষয়ে পরীক্ষা দিতে আসে। পরীক্ষার হলে সালমা ও শিক্ষক আবদুল জলিল দায়িত্বে ছিলেন। সেখানে দুই শিক্ষকের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। হঠাৎ করে সালমার দৃষ্টি পড়ে ফাতেমার দিকে। এ সময় রাগান্বিত হয়ে তার উদ্দেশ্যে সালমা বলেন- তুই তো আমার টাকা দিলি না। এ সময় তাকে গালমন্দও করেন। একপর্যায়ে তাকে এলোপাতাড়ি চড় থাপ্পড় দিতে থাকেন। এ সময় পাশে থাকা নুহাকেও তিনি চড়-থাপ্পড় মারেন। তখন ফাতেমার মুখে খামছি দিয়ে জখম করেন শিক্ষক সালমা।

খবর পেয়ে ফাতেমার মা মর্জিনা বেগম মাদ্রাসায় আসেন। এ সময় মেয়ের মুখে রক্ত দেখে তিনি চিৎকার করে কান্না শুরু করেন। চিৎকার করে তিনি এ বিষয়ে জানতে চান।

ফাতেমা আক্তার মীম বলেন, সবার সামনে শিক্ষক সালমা তাকে চড়-থাপ্পড় মারেন। তিনি আমার মুখের হিজাব টেনে খুলে ফেলেন। এ সময় তার নখ লেগে আমার মুখ রক্তাক্ত হয়।

ফাতেমার মা মর্জিনা বেগম বলেন, আমি এ ঘটনার সঠিক বিচার চাই। আমি ইউএনও ও সদর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছি। অপরাধ না করেও আমার মেয়ে মারধরের শিকার হয়েছে। এটি ন্যক্কারজনক ঘটনা।

রাত পৌনে ৭টার দিকে নুহার বাবা শিক্ষক খবির উদ্দিন বলেন, আমার মেয়েকে অন্যায়ভাবে শিক্ষক সালমা কয়েকটি থাপ্পড় দিয়েছে। তাৎক্ষণিক আমার মেয়েই অধ্যক্ষের কাছে অভিযোগ করেছে। আমি প্রতিষ্ঠানের সভাপতি লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোছাইন আকন্দের কাছে অভিযোগ করব।

অভিযুক্ত শিক্ষক সালমা বলেন, মীম আমার কাছে ৫ মাস প্রাইভেট পড়েছে। হঠাৎ করে সে প্রাইভেট পড়া বন্ধ করে দেয়। সে আমার টাকাও দেয়নি। উল্টো সে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছিল। এজন্য তাকে চড়-থাপ্পড় দিয়েছি। এখানে দোষের কিছু নেই।

মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা নেছার উদ্দিন বলেন, ঘটনাটি ন্যক্কারজনক। শিক্ষকের এ কাণ্ড মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। শিক্ষক এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে কোনোভাবেই পারেন না। মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সঙ্গে কথা বলে কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রাত ৭টার দিকে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোসলেহ উদ্দিন বলেন, আহত ছাত্রী ফাতেমা লিখিত অভিযোগ করেছে। ঘটনাটি খতিয়ে দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) আনোয়ার হোছাইন আকন্দ জানান, ঘটনাটি শুনেছি। ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। বিস্তারিত জেনে এ ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ । রিপু /প্রতিদিনের পোস্ট

Facebook Comments Box
সম্পাদনাকারীর তথ্য

Khalid Hasan Ripu

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে শ্রীমঙ্গলে আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

“টাকা না দেওয়ায় পরীক্ষার হলে ২ ছাত্রীকে পেটালেন শিক্ষক”

আপডেট : ০৫:০৯:০৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ নভেম্বর ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিদিনের পোস্ট || টাকা না দেওয়ায় পরীক্ষার হলে ২ ছাত্রীকে পেটালেন শিক্ষক|

লক্ষ্মীপুরে পরীক্ষার হলে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ফাতেমা আক্তার মীম ও নুহা আক্তারকে মারধরের পর খামছি দিয়ে জখম করার অভিযোগ উঠেছে। লক্ষ্মীপুর দারুল উলুম কামিল মাদ্রাসার (আলিয়া মাদ্রাসা) বাংলা শিক্ষক সালমা আক্তারের কাছে প্রাইভেট পড়ার টাকা না দেওয়ায় তিনি এ ঘটনা ঘটিয়েছেন।

মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) বিকালে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমরান হোসেন ও সদর থানায় এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ করেন ফাতেমা। এর আগে সকালে মাদ্রাসায় পরীক্ষা চলাকালে ওই শিক্ষক দুই ছাত্রীকে পিটিয়েছেন।

ভুক্তভোগী ফাতেমা মাদ্রাসার নবম শ্রেণির ছাত্রী ও নুহা ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। ফাতেমা সদর উপজেলার পার্বতীনগর ইউনিয়নের পার্বতীনগর গ্রামের দুলাল হোসেনের মেয়ে। তার মুখে শিক্ষকের খামছি দেওয়া আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এছাড়া নুহা একই মাদ্রাসার ইবতেদায়ি শিক্ষক খবির উদ্দিনের মেয়ে। তাদের সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

মাদ্রাসার শিক্ষক ও ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফাতেমা এক সময় সালমার কাছে বাংলা বিষয়ে প্রাইভেট পড়ত। তখন ১০ দিন পড়েই ফাতেমা আর পড়তে যায়নি। তবে ওই ১০ দিনের টাকা দিতে চেয়েছিল সে, কিন্তু শিক্ষক টাকা নেননি।

মঙ্গলবার সকালে ফাতেমা হাদিস বিষয়ে পরীক্ষা দিতে আসে। পরীক্ষার হলে সালমা ও শিক্ষক আবদুল জলিল দায়িত্বে ছিলেন। সেখানে দুই শিক্ষকের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। হঠাৎ করে সালমার দৃষ্টি পড়ে ফাতেমার দিকে। এ সময় রাগান্বিত হয়ে তার উদ্দেশ্যে সালমা বলেন- তুই তো আমার টাকা দিলি না। এ সময় তাকে গালমন্দও করেন। একপর্যায়ে তাকে এলোপাতাড়ি চড় থাপ্পড় দিতে থাকেন। এ সময় পাশে থাকা নুহাকেও তিনি চড়-থাপ্পড় মারেন। তখন ফাতেমার মুখে খামছি দিয়ে জখম করেন শিক্ষক সালমা।

খবর পেয়ে ফাতেমার মা মর্জিনা বেগম মাদ্রাসায় আসেন। এ সময় মেয়ের মুখে রক্ত দেখে তিনি চিৎকার করে কান্না শুরু করেন। চিৎকার করে তিনি এ বিষয়ে জানতে চান।

ফাতেমা আক্তার মীম বলেন, সবার সামনে শিক্ষক সালমা তাকে চড়-থাপ্পড় মারেন। তিনি আমার মুখের হিজাব টেনে খুলে ফেলেন। এ সময় তার নখ লেগে আমার মুখ রক্তাক্ত হয়।

ফাতেমার মা মর্জিনা বেগম বলেন, আমি এ ঘটনার সঠিক বিচার চাই। আমি ইউএনও ও সদর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছি। অপরাধ না করেও আমার মেয়ে মারধরের শিকার হয়েছে। এটি ন্যক্কারজনক ঘটনা।

রাত পৌনে ৭টার দিকে নুহার বাবা শিক্ষক খবির উদ্দিন বলেন, আমার মেয়েকে অন্যায়ভাবে শিক্ষক সালমা কয়েকটি থাপ্পড় দিয়েছে। তাৎক্ষণিক আমার মেয়েই অধ্যক্ষের কাছে অভিযোগ করেছে। আমি প্রতিষ্ঠানের সভাপতি লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোছাইন আকন্দের কাছে অভিযোগ করব।

অভিযুক্ত শিক্ষক সালমা বলেন, মীম আমার কাছে ৫ মাস প্রাইভেট পড়েছে। হঠাৎ করে সে প্রাইভেট পড়া বন্ধ করে দেয়। সে আমার টাকাও দেয়নি। উল্টো সে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছিল। এজন্য তাকে চড়-থাপ্পড় দিয়েছি। এখানে দোষের কিছু নেই।

মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা নেছার উদ্দিন বলেন, ঘটনাটি ন্যক্কারজনক। শিক্ষকের এ কাণ্ড মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। শিক্ষক এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে কোনোভাবেই পারেন না। মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সঙ্গে কথা বলে কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রাত ৭টার দিকে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোসলেহ উদ্দিন বলেন, আহত ছাত্রী ফাতেমা লিখিত অভিযোগ করেছে। ঘটনাটি খতিয়ে দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) আনোয়ার হোছাইন আকন্দ জানান, ঘটনাটি শুনেছি। ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। বিস্তারিত জেনে এ ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ । রিপু /প্রতিদিনের পোস্ট

Facebook Comments Box