০২:০৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

নবীনগরে এক নারীকে বিবস্ত্র করে মধ্যযুগীয় কায়দায় বর্বরোচিত হামলার অভিযোগ

মোঃ আলমগীর হোসেন, প্রতিদিনের পোস্ট: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে এক অসহায় নারীকে মধ্যযুগীয় কায়দায় বিবস্ত্র করে তার পায়ের রগ কেটে ও স্পর্শকাতর স্থানে রক্তাক্ত জখম করে হত্যার চেষ্ঠার অভিযোগ উঠেছে। গত ৩১ আগস্ট সন্ধ্যায় শিবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের উত্তর পূর্ব পাশের রাস্তায় এই নৃশংস হামলার ঘটনাটি ঘটে।

এই নৃশংস ও বর্বরোচিত হামলার শিকার শিবপুর কলেজ পাড়ার মলাই মিয়ার মেয়ে মোছাঃ নাছিমা আক্তারকে মুমূর্ষ অবস্থায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে নেয়া হলে কতব্যরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। নাছিমা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এখন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। এ ঘটনায় শিবপুর ইউনিয়নের নূরুল ইসলামের ছেলে হাজী মোছা মিয়াকে প্রধান আসামী করে ১৬জন নামীয় ও অজ্ঞাতসহ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়।

বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার একটি অনুষ্ঠানে শিবপুর গেলে সেখানে নাছিমার মা হোছনে আরা বেগম নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে এ অভিযোগ করে ন্যায় বিচারের দাবী জানান। নির্বাহী অফিসার তানভীর ফরহাদ শামিম তাদেরকে অবশ্যই আইনী প্রক্রিয়ায় ন্যায়বিচার পাবেন বলে আশ্বস্ত করেন।

অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মলাই মিয়া তার স্ত্রী ও ৬ মেয়ে নিয়ে শিবপুর কলেজ পাড়ায় নীজ বসতবাড়িতে বসবাস করে আসছে। তিনি ও তার স্ত্রী বর্তমানে অসুস্থ অবস্থায় বিছানায় শয্যাশায়।একটি জমি ক্রয়/বিক্রয় নিয়ে এই পরিবারের সাথে মোছা মিয়ার সামাজিক বিরোধ চলে আসছে। শিবপুর ইউনিয়ন সদরে নাছিমাদের মূল্যবান ১১ শতক একটি জায়গা রয়েছে। ওই জায়গা বিক্রী করার জন্য মোছা নাছিমাকে প্রস্তাব দেয়। ওই প্রস্তাবে সম্মতি না দেওয়ায় তার উপর সশস্ত্র দলবল নিয়ে এ হামলা চালানো হয়।

আহত নাছিমা জানায়, মোছা এলাকায় অহসায় এতিমদের জমি জবরদখল, সন্ত্রাসবাদ ও নানাহ অপকর্মেও সাথে জড়িত এ গুলোর প্রতিবাদ করায় তার সাথে আমার সামাজিক বিরোধ। তার কাছে জমি বিক্রীর প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় সে প্রকাশ্যে ঘোষনা দেয় যে কোন মূল্যে আমার এই সম্পত্তি সে দখল করবে। সেই পূর্ব পরিকল্পনায় আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে এ হামলা করা হয়। আমাকে ঘটনাস্থল থেকে দেশীয় অস্ত্র উদ্ধারের সময় পড়ে থাকা আমার মোবাইল ফোনটি শিবপুর ফাঁড়ি পুলিশ নিয়ে যায়। সেই মোবাইলে মোছার সকল অপকর্মের ভিডিও অডিও রেকড ও গুরুত্বপূর্ন তথ্য রয়েছে।

নাছিমা আরো বলেন, গ্রামে তাদের একটি বাগানবাড়ি নিয়ে প্রতিপক্ষের সঙ্গে বিরোধ রয়েছে। এর জেরে গত ১৬ আগস্ট তার ছোট বন চয়নিকাকে অপহরণের চেষ্টা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় ৩১ আগস্ট চয়নিকা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা দায়রা জজ আদালতে অপহরণচেষ্টার অভিযোগে একটি মামলা করেন। এতে আসামি করা হয় স্থানীয় ইকবাল হোসেনসহ আরও কয়েকজনকে। নাছিমাও সেদিন তার বোনের সঙ্গে গিয়েছিলেন।

এ ঘটনায় গত বুধবার মোছা মিয়াকে প্রধান আসামি করে ১৬ জনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা করেছেন।
মামলার পরও আসামিরা এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এতে আমার গোটা পরিবার এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে।’

অভিযুক্ত মো: মোছা মিয়া বলেন, আমি এ ঘটনার সাথে জড়িত নই, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে আমাকে ফাঁসাতে এ মামলার আসামী করা হয়েছে। এ সময় তাকে মামলার এক নম্বর আসামি করার পেছনে শিবপুরের বর্তমান চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা এমআর মুজিবের ইন্ধন রয়েছে বলে অভিযোগ করেন মোছা।

এ ব্যাপারে শীবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম আর মুজিব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি চাই এ ঘটনায় যাতে কোন নিরপরাধ ব্যক্তি যেন সাজা না পায়, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হউক।

এ ব্যাপারে থানার অফিসার ইনচার্জ মাহবুব আলম প্রতিদিনের পোস্টকে বলেন, অভিযোগ যাথারীতি এফআইআর করা হয়েছে, আইনী প্রক্রিয়ায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন হবে।

Facebook Comments Box
ট্যাগস :
জনপ্রিয়

নবীনগরে এক নারীকে বিবস্ত্র করে মধ্যযুগীয় কায়দায় বর্বরোচিত হামলার অভিযোগ

প্রকাশ : ০৮:৪৮:২৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩

মোঃ আলমগীর হোসেন, প্রতিদিনের পোস্ট: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে এক অসহায় নারীকে মধ্যযুগীয় কায়দায় বিবস্ত্র করে তার পায়ের রগ কেটে ও স্পর্শকাতর স্থানে রক্তাক্ত জখম করে হত্যার চেষ্ঠার অভিযোগ উঠেছে। গত ৩১ আগস্ট সন্ধ্যায় শিবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের উত্তর পূর্ব পাশের রাস্তায় এই নৃশংস হামলার ঘটনাটি ঘটে।

এই নৃশংস ও বর্বরোচিত হামলার শিকার শিবপুর কলেজ পাড়ার মলাই মিয়ার মেয়ে মোছাঃ নাছিমা আক্তারকে মুমূর্ষ অবস্থায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে নেয়া হলে কতব্যরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। নাছিমা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এখন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। এ ঘটনায় শিবপুর ইউনিয়নের নূরুল ইসলামের ছেলে হাজী মোছা মিয়াকে প্রধান আসামী করে ১৬জন নামীয় ও অজ্ঞাতসহ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়।

বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার একটি অনুষ্ঠানে শিবপুর গেলে সেখানে নাছিমার মা হোছনে আরা বেগম নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে এ অভিযোগ করে ন্যায় বিচারের দাবী জানান। নির্বাহী অফিসার তানভীর ফরহাদ শামিম তাদেরকে অবশ্যই আইনী প্রক্রিয়ায় ন্যায়বিচার পাবেন বলে আশ্বস্ত করেন।

অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মলাই মিয়া তার স্ত্রী ও ৬ মেয়ে নিয়ে শিবপুর কলেজ পাড়ায় নীজ বসতবাড়িতে বসবাস করে আসছে। তিনি ও তার স্ত্রী বর্তমানে অসুস্থ অবস্থায় বিছানায় শয্যাশায়।একটি জমি ক্রয়/বিক্রয় নিয়ে এই পরিবারের সাথে মোছা মিয়ার সামাজিক বিরোধ চলে আসছে। শিবপুর ইউনিয়ন সদরে নাছিমাদের মূল্যবান ১১ শতক একটি জায়গা রয়েছে। ওই জায়গা বিক্রী করার জন্য মোছা নাছিমাকে প্রস্তাব দেয়। ওই প্রস্তাবে সম্মতি না দেওয়ায় তার উপর সশস্ত্র দলবল নিয়ে এ হামলা চালানো হয়।

আহত নাছিমা জানায়, মোছা এলাকায় অহসায় এতিমদের জমি জবরদখল, সন্ত্রাসবাদ ও নানাহ অপকর্মেও সাথে জড়িত এ গুলোর প্রতিবাদ করায় তার সাথে আমার সামাজিক বিরোধ। তার কাছে জমি বিক্রীর প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় সে প্রকাশ্যে ঘোষনা দেয় যে কোন মূল্যে আমার এই সম্পত্তি সে দখল করবে। সেই পূর্ব পরিকল্পনায় আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে এ হামলা করা হয়। আমাকে ঘটনাস্থল থেকে দেশীয় অস্ত্র উদ্ধারের সময় পড়ে থাকা আমার মোবাইল ফোনটি শিবপুর ফাঁড়ি পুলিশ নিয়ে যায়। সেই মোবাইলে মোছার সকল অপকর্মের ভিডিও অডিও রেকড ও গুরুত্বপূর্ন তথ্য রয়েছে।

নাছিমা আরো বলেন, গ্রামে তাদের একটি বাগানবাড়ি নিয়ে প্রতিপক্ষের সঙ্গে বিরোধ রয়েছে। এর জেরে গত ১৬ আগস্ট তার ছোট বন চয়নিকাকে অপহরণের চেষ্টা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় ৩১ আগস্ট চয়নিকা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা দায়রা জজ আদালতে অপহরণচেষ্টার অভিযোগে একটি মামলা করেন। এতে আসামি করা হয় স্থানীয় ইকবাল হোসেনসহ আরও কয়েকজনকে। নাছিমাও সেদিন তার বোনের সঙ্গে গিয়েছিলেন।

এ ঘটনায় গত বুধবার মোছা মিয়াকে প্রধান আসামি করে ১৬ জনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা করেছেন।
মামলার পরও আসামিরা এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এতে আমার গোটা পরিবার এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে।’

অভিযুক্ত মো: মোছা মিয়া বলেন, আমি এ ঘটনার সাথে জড়িত নই, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে আমাকে ফাঁসাতে এ মামলার আসামী করা হয়েছে। এ সময় তাকে মামলার এক নম্বর আসামি করার পেছনে শিবপুরের বর্তমান চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা এমআর মুজিবের ইন্ধন রয়েছে বলে অভিযোগ করেন মোছা।

এ ব্যাপারে শীবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম আর মুজিব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি চাই এ ঘটনায় যাতে কোন নিরপরাধ ব্যক্তি যেন সাজা না পায়, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হউক।

এ ব্যাপারে থানার অফিসার ইনচার্জ মাহবুব আলম প্রতিদিনের পোস্টকে বলেন, অভিযোগ যাথারীতি এফআইআর করা হয়েছে, আইনী প্রক্রিয়ায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন হবে।

Facebook Comments Box