০৫:২৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

নবীনগরে ঘরে ঢুকে এক বৃদ্ধাকে খুন! গ্রেপ্তার ১

মোঃ আলমগীর হোসেন, প্রতিদিনের পোস্ট:  ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার কড়ইবাড়ি গ্রামে মরিয়ম বেগম (৭০) নামের এক বৃদ্ধাকে ঘরে ঢুকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, চুরি করার উদ্দেশ্যে চোরের দল মধ্যরাতে ঘরে প্রবেশের পর বৃদ্ধা টের পেয়ে বাঁধা দেয়ায়, চোরেরা ওই বৃদ্ধাকে নৃশংসভাবে খুন করে।

তবে নিহতের পরিবার বলছে, এটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। পুলিশ এ ঘটনার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই ইউসুফ প্রকাশ ওরফে বুইদ্দা (৩৩) নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

এ বিষয়ে নিহতের ছেলে মামুন মিয়া বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি দিয়ে নবীনগর থানায় ৩০২/৩৪ ধারা একটি হত্যা মামলা করেছেন।

পুলিশ, এলাকাবসি ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার কড়ইবাড়ি গ্রামের পশ্চিম পাড়ার মৃত মিলন মিয়ার স্ত্রী মরিয়ম বেগম তার বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে একাই বসবাস করতেন। বৃদ্ধার দুই ছেলে এক মেয়ের মধ্য বড় ছেলে অনেক আগেই মারা গেছেন। ছোট ছেলে পরিবার নিয়ে ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। একমাত্র মেয়ে উপজেলার বাঙ্গরায় স্থায়ীভাবে স্বামী সংসার নিয়ে বসবাস করেন। ফলে ওই বৃদ্ধাকে একাই তার গ্রামের বাড়িতে থাকতে হত।

ঘটনার দিন গত রবিবার(১৮ জুন) বিকালে বৃদ্ধার ঘরের দরজা বন্ধ দেখতে পেয়ে প্রতিবেশীরা তাকে প্রচুর ডাকাডাকি করেও কোন সাড়াশব্দ পাচ্ছিলেন না। পরে ঘরের পেছনের দরজা খোলা দেখতে পেয়ে লোকজন ঘরে ঢুকে ঘরে থাকা স্টীলের আলমারী ভাঙ্গা অবস্থায় তছনছ করা সহ ওই বৃদ্ধাকে মেঝেতে রক্তাক্ত অবস্থায় মৃত পড়ে থাকতে দেখেন। লাশ উদ্ধার করে রাতেই থানায় নিয়ে আসা হয়।

মায়ের নিহত হওয়ার খবর পেয়ে ঢাকা থেকে ছুটে আসা বৃদ্ধার ছেলে (সেলুন ব্যবসায়ী) ও হত্যা মামলার বাদী মো. মামুন মিয়া (৩৪) বলেন,’আমার মায়ের হত্যার পেছনে দুটি কারণ থাকতে পারে। প্রথমত চোরের দল ঘরে চুরি করতে এসে আলমারী ভেঙ্গে যখন টাকা পয়সা লুট করে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন হয়তো আমার মা টের পেয়ে চোরকে চিনে ফেলে। সে কারণে চোরের দল মাকে নির্মমভাবে মাথায় লোহার রড (শাবল) দিয়ে আঘাত করে খুন করে থাকতে পারে। আর দ্বিতীয়ত আমাদের ধারণা, এটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। অর্থাৎ মা ঘরে একা থাকেন। তাই ঘরে থাকা টাকা পয়সা ও জিনিসপত্র লুটে নিতেই দুবৃত্তরা রাতের আঁধারে মাকে পরিকল্পিতভাবে খুন করে সব লুটে নিয়েছে। তবে আশার কথা হল, পুলিশ দ্রুত এ ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। আশা করছি, এখন পুলিশ সুষ্ঠু তদন্ত করলেই হত্যার মূল রহস্য বের হয়ে যাবে।’

এ বিষয়ে নবীনগর থানার ওসি সাইফুদ্দিন আনোয়ার বলেন,’নিহত বৃদ্ধার মাথায় প্রচন্ড আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তবে কি কারণে এ হত্যাকান্ড ঘটেছে, সেটি পুলিশ গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখছে। ইতিমধ্যে নিহতের ছেলে বাদী হয়ে মামলা করেছেন। একজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। আমরা লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য জেলা মর্গে পাঠিয়েছি।’

এক প্রশ্নের উত্তরে ওসি আরও জানান, এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া বুইদ্দাকে সন্দেহভাজন হিসেবে আজ (সোমবার) সকালে ইব্রাহিমপুর থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার মূল বাড়ি বাঙ্গরা থানার দৌলতপুরে। তবে সে উপজেলার চেলিখোলা গ্রামে বসবাস করে। ঘটনার সঙ্গে সে কতটা জড়িত সেটি সহসাই জানা যাবে।’

জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নবীনগর সার্কেল) সিরাজুল ইসলাম ঘটনাস্থল ঘুরে এসে বলেন,’বৃদ্ধা খুনের ঘটনার সংবাদ পেয়েই ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। ইতিমধ্যে মামলা হয়েছে এবং ঘটনার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই একজন গ্রেপ্তারও হয়েছে। আশা করছি, শীঘ্রই বৃদ্ধা হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটন হবে।

Facebook Comments Box
জনপ্রিয়

নবীনগরে ঘরে ঢুকে এক বৃদ্ধাকে খুন! গ্রেপ্তার ১

প্রকাশ : ০১:৪১:২১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ জুন ২০২৩

মোঃ আলমগীর হোসেন, প্রতিদিনের পোস্ট:  ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার কড়ইবাড়ি গ্রামে মরিয়ম বেগম (৭০) নামের এক বৃদ্ধাকে ঘরে ঢুকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, চুরি করার উদ্দেশ্যে চোরের দল মধ্যরাতে ঘরে প্রবেশের পর বৃদ্ধা টের পেয়ে বাঁধা দেয়ায়, চোরেরা ওই বৃদ্ধাকে নৃশংসভাবে খুন করে।

তবে নিহতের পরিবার বলছে, এটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। পুলিশ এ ঘটনার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই ইউসুফ প্রকাশ ওরফে বুইদ্দা (৩৩) নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

এ বিষয়ে নিহতের ছেলে মামুন মিয়া বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি দিয়ে নবীনগর থানায় ৩০২/৩৪ ধারা একটি হত্যা মামলা করেছেন।

পুলিশ, এলাকাবসি ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার কড়ইবাড়ি গ্রামের পশ্চিম পাড়ার মৃত মিলন মিয়ার স্ত্রী মরিয়ম বেগম তার বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে একাই বসবাস করতেন। বৃদ্ধার দুই ছেলে এক মেয়ের মধ্য বড় ছেলে অনেক আগেই মারা গেছেন। ছোট ছেলে পরিবার নিয়ে ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। একমাত্র মেয়ে উপজেলার বাঙ্গরায় স্থায়ীভাবে স্বামী সংসার নিয়ে বসবাস করেন। ফলে ওই বৃদ্ধাকে একাই তার গ্রামের বাড়িতে থাকতে হত।

ঘটনার দিন গত রবিবার(১৮ জুন) বিকালে বৃদ্ধার ঘরের দরজা বন্ধ দেখতে পেয়ে প্রতিবেশীরা তাকে প্রচুর ডাকাডাকি করেও কোন সাড়াশব্দ পাচ্ছিলেন না। পরে ঘরের পেছনের দরজা খোলা দেখতে পেয়ে লোকজন ঘরে ঢুকে ঘরে থাকা স্টীলের আলমারী ভাঙ্গা অবস্থায় তছনছ করা সহ ওই বৃদ্ধাকে মেঝেতে রক্তাক্ত অবস্থায় মৃত পড়ে থাকতে দেখেন। লাশ উদ্ধার করে রাতেই থানায় নিয়ে আসা হয়।

মায়ের নিহত হওয়ার খবর পেয়ে ঢাকা থেকে ছুটে আসা বৃদ্ধার ছেলে (সেলুন ব্যবসায়ী) ও হত্যা মামলার বাদী মো. মামুন মিয়া (৩৪) বলেন,’আমার মায়ের হত্যার পেছনে দুটি কারণ থাকতে পারে। প্রথমত চোরের দল ঘরে চুরি করতে এসে আলমারী ভেঙ্গে যখন টাকা পয়সা লুট করে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন হয়তো আমার মা টের পেয়ে চোরকে চিনে ফেলে। সে কারণে চোরের দল মাকে নির্মমভাবে মাথায় লোহার রড (শাবল) দিয়ে আঘাত করে খুন করে থাকতে পারে। আর দ্বিতীয়ত আমাদের ধারণা, এটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। অর্থাৎ মা ঘরে একা থাকেন। তাই ঘরে থাকা টাকা পয়সা ও জিনিসপত্র লুটে নিতেই দুবৃত্তরা রাতের আঁধারে মাকে পরিকল্পিতভাবে খুন করে সব লুটে নিয়েছে। তবে আশার কথা হল, পুলিশ দ্রুত এ ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। আশা করছি, এখন পুলিশ সুষ্ঠু তদন্ত করলেই হত্যার মূল রহস্য বের হয়ে যাবে।’

এ বিষয়ে নবীনগর থানার ওসি সাইফুদ্দিন আনোয়ার বলেন,’নিহত বৃদ্ধার মাথায় প্রচন্ড আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তবে কি কারণে এ হত্যাকান্ড ঘটেছে, সেটি পুলিশ গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখছে। ইতিমধ্যে নিহতের ছেলে বাদী হয়ে মামলা করেছেন। একজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। আমরা লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য জেলা মর্গে পাঠিয়েছি।’

এক প্রশ্নের উত্তরে ওসি আরও জানান, এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া বুইদ্দাকে সন্দেহভাজন হিসেবে আজ (সোমবার) সকালে ইব্রাহিমপুর থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার মূল বাড়ি বাঙ্গরা থানার দৌলতপুরে। তবে সে উপজেলার চেলিখোলা গ্রামে বসবাস করে। ঘটনার সঙ্গে সে কতটা জড়িত সেটি সহসাই জানা যাবে।’

জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নবীনগর সার্কেল) সিরাজুল ইসলাম ঘটনাস্থল ঘুরে এসে বলেন,’বৃদ্ধা খুনের ঘটনার সংবাদ পেয়েই ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। ইতিমধ্যে মামলা হয়েছে এবং ঘটনার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই একজন গ্রেপ্তারও হয়েছে। আশা করছি, শীঘ্রই বৃদ্ধা হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটন হবে।

Facebook Comments Box