
শুভ চক্রবর্ত্তী, প্রতিদিনের পোস্ট || ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার নাটঘর গ্রামের ৪০০ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী নটরাজ মন্দিরটির সংস্কার করে কষ্টিপাথরের নটরাজ বিগ্রহটির পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
কথিত আছে যে প্রায় ৪০০ বছর পূর্বে ঐ এলাকার জমিদারের উদ্যোগে তারাপুকুর নামে একটি পুকুর খননের সময় মাটির নিচ থেকে ভগবান শিবের নটরাজ রূপের কষ্টিপাথরের একটি বিগ্রহ প্রকট হয়ে ছিলো এবং পুকুরটি খননের সময় কর্মরত শ্রমিকের আঘাতে শ্রীবিগ্রহটির বাম হাতে কনিষ্ঠা আঙুল থেকে রক্তও প্রবাহিত হয়েছিলো।
এর কিছুদিনের মধ্যেই স্থানীয় এক ব্রাহ্মণকে ভগবান শিব নটরাজ মন্দির স্থাপনের জন্য স্বপ্নে আদেশ করেছিলেন। তখন ঐ ব্রাহ্মণ জমিদার ও গ্রামবাসীর সহায়তায় নটরাজ মন্দিরটি স্থাপন করেছিলেন। এই মন্দিরের অলৌকিক ঘটনা চার দিকে ছড়িয়ে পড়লে দূরদূরান্ত থেকে বহু মানুষ আসতে শুরু করে। তখন জমিদার ভগবান নটরাজের নাম অনুসারে ঐ গ্রামের ‘নাটঘর’ নামকরণ করেন।
এই নাটঘর গ্রামটি বর্তমানে নবীনগর উপজেলার একটি সমৃদ্ধ ইউনিয়ন। সম্প্রতি মন্দিরটি সংস্কার করে একটি নান্দনিক রূপ দেওয়া হয়েছে।
নটরাজ মন্দিরটি সংস্কারের প্রথম উদ্যোগ নেন স্থানীয় বাসিন্দা নয়ন কর। তিনি জানান, বহু বছরের পুরনো মন্দিরটি জরাজীর্ণ হয়ে এর বিভিন্ন অংশ একেবারে ভেঙে যায়। ঝড়বৃষ্টির সময় মন্দিরের ভেতর জল উঠে যেত। তাই, আমি নটরাজ মন্দিরটি সংস্কারের প্রথম উদ্যোগ নেই। স্থানীয় প্রভাবশালীদের বাঁধা স্বত্বেও আমি ও ধর্মপ্রাণ বেশ কয়েকজন ধন্যাঢ্য ব্যক্তির সহায়তায় এবং ভগবান নটরাজের কৃপায় মন্দিরটি সংস্কার করতে সক্ষম হই।
গত শুক্রবার (৩রা ফেব্রুয়ারী) দিনব্যাপী মাঙ্গলিক ক্রিয়া-কর্মের মাধ্যমে সংস্কারকৃত মন্দিরটির উদ্বোধন ও নটরাজ বিগ্রহের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হয়।
দিনব্যাপী মাঙ্গলিক ক্রিয়ায় পৌরহিত্য করেন শ্রী নন্দন চক্রবর্তী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আলোচনা সভায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড শ্রীশ্রী ভোলাগিরি সেবাশ্রমের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ স্বামী উমেশানন্দ গিরি মহারাজ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক শ্রীকুশল বরণ চক্রবর্তী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া কালভৈরব মন্দির কমিটির সভাপতি পলাশ ভট্টাচার্য্য, উপজেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অজন্ত ভদ্র, জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান যুব ঐক্য পরিষদের সভাপতি বাপ্পি সাহা, রাজু বনিক, জেলা সনাতন বিদ্যার্থী সংসদের সাধারণ সম্পাদক রাজু দেবনাথ প্রমুখ।
এদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিবর্গ এই মাঙ্গলিক আয়োজনের অংশ গ্রহণ করেন।
এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ন বেআইনী এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ /প্রতিদিনের পোস্ট