
স্পোর্টস ডেস্ক: গোল-পাল্টা গোলের ম্যাচ। কিলিয়ান এমবাপ্পের কাছে তিন গোল হজম করলেন আর্জেন্টিনার গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্তিনেজ। হাত ফসকে যেতে বসেছিল বিশ্বকাপ ট্রফি। ৩-৩ স্কোরে ম্যাচ গড়ালো টাইব্রেকারে। সব চাপ পড়লো তার ওপর। নেদারল্যান্ডসকে কোয়ার্টার ফাইনালে দুটি সেভে টাইব্রেকার জয়ের নায়ক আবারও ত্রাতার ভূমিকায়। প্রথম শটে এমবাপ্পের কাছে ফের পরাস্ত হলেও কিংসলে কোম্যানকে ঠেকালেন, ম্যাচের মোড় গেলো ঘুরে। এরপর গোলবারের পাশ দিয়ে মারলেন শুয়ামেনি। ব্যস, ৪-২ গোলে জিতে ৩৬ বছরের অপেক্ষার অবসান। ম্যাচ শেষে মার্তিনেজ হু হু করে কাঁদলেন, নিজের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করার খুশি ঝরছিল আনন্দ অশ্রু হয়ে।
ম্যাচ শেষে মার্তিনেজ বললেন, ‘এই খেলায় আমরা ভুগেছি। দুটি শট, তারা (ফ্রান্স) সমতায় ফিরলো। তারা আবার পেনাল্টি পেলো, গোল করলো। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ যে আমি আমার কাজ করেছি, যেটার স্বপ্ন দেখতাম।’
দুই গোলে এগিয়ে আর্জেন্টিনা। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হতে আর ১০ মিনিট বাকি। নিকোলাস ওটামেন্ডি বক্সের মধ্যে মুয়ানিকে করে বসলেন ফাউল। পেনাল্টির বাঁশি বাজলো। কিলিয়ান এমবাপ্পে নিতে এলেন শট। গতিপথ বুঝতে পেরে ডানদিকেই ঝাঁপিয়ে পড়লেন, তার হাতে ছুঁয়ে জাল কাঁপলো। পরের মিনিটে এমবাপ্পের আরেকটি দুর্দান্ত গোল। ২-২ এ স্কোর থেকে অতিরিক্ত সময়ে গড়ায় ম্যাচ। ১১৮তম মিনিটে পেনাল্টি থেকে নিজের হ্যাটট্রিক পূরণ করেন এমবাপ্পে। এবার কোনও পাত্তাই পাননি মার্তিনেজ।
পেনাল্টিতে নির্ভার থাকার কথা বললেন তিনি, ‘আমি এমন বিশ্বকাপের স্বপ্ন দেখিনি। আমি পেনাল্টি শুটআউটের সময় শান্ত ছিলাম।’
আরও পড়ুন: বিশ্বকাপের শুরুতে তাকে কেউ আমলেই নেয়নি। প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের বিপক্ষে হারের পর কোচ লিওনেল স্কালোনি যেন তার আসল তুরুপের তাস এনজোকে বের করে আনেন। গ্রুপ পর্বের দ্বিতীয় ম্যাচ থেকে শুরু করে বিশ্বকাপের পরবর্তী সবগুলো ম্যাচে আর্জেন্টিনার মিডফিল্ডের অতন্দ্র প্রহরী ছিলেন এই বেনফিকার ফুটবলার।
বিশ্বকাপ দুর্দান্ত পারফর্ম করে জয় করলেন বিশ্বকাপের সেরা ইয়াং ফুটবলারের ট্রফি। মেক্সিকোর বিপক্ষে দুর্দান্ত একটি গোলও করেছিলেন এনজো। মাঝমাঠে ফ্রান্সকে প্রথম দিকে আটকে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এনজো। টুর্নামেন্টের ইয়াং ফুটবলার হওয়ার পথে তিনি অন্য অনেককে হারিয়েছেন।
আরও পড়ুন: কাতারের আলখাল্লা পরে বিশ্বকাপ ট্রফি নিলেন মেসি
১৮ ডিসেম্বর যেন স্বপ্নের একটি দিন লিওনেল মেসির। নিজের স্বপ্নের অধরা বিশ্বকাপ ট্রফি তিনি জয়লাভ করলেন। ফাইনালে ফ্রান্সকে টাইব্রেকারে ৪-২ ব্যবধানে হারিয়ে বিশ্বকাপ জিতলো মেসির আর্জেন্টিনা।
এবারের বিশ্বকাপটা সুন্দরভাবেই আয়োজন করেছে কাতার। নিজেদের সেরাটা দিতে কোন কিছুর কমতি করেনি তারা। নিজেদের সংস্কৃতিকে সবসময় ফুটিয়ে তুলেছে তারা নানাভাবে। বিশ্বকাপের ফাইনালেও সেটি ফুটিয়ে তুললো।
ট্রফি নেওয়ার সময় ফিফা প্রেসিডেন্ট ইনফ্যান্তিনো ও কাতারের আমির মেসিকে একটি কাতারের আলখাল্লা পরিয়ে দেন। যা কাতারের ঐতিহ্যগতভাবে বেশ পরিচিত। এটি পরেই মেসিকে বিশ্বকাপ ট্রফি হাতে জয় উদযাপন করতে দেখা যায়।
আরও পড়ুন: গোল্ডেন বল মেসির, গোল্ডেন গ্লাভস মার্টিনেজের
২০১৪ বিশ্বকাপেও টুর্নামেন্টের সেরা ফুটবলারের পুরস্কার গোল্ডেন বল জিতেছিলেন লিওনেল মেসি। কিন্তু সেবার থাকতে হয়েছে পরাজিতের দলে।
৮ বছর পর ২০২২ সালে এসে বিশ্বকাপটাই জিতে নিলেন তিনি। সে সঙ্গে আবারও জিতলেন গোল্ডেন বল। ইতিহাসের প্রথম ফুটবলার হিসেবে দ্বিতীয়বার গোল্ডেন বল উঠলো মেসির হাতে।
আরেকটি বিশ্বকাপের ফাইনালে তুলেছেন আর্জেন্টিনাকে। এবার আর স্বপ্নভঙ্গ নয়। বিশ্বকাপ জিতেই সব আক্ষেপ ঘুচিয়েছেন লিওনেল মেসি।
স্মরণীয় কাতার বিশ্বকাপে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের স্বীকৃতিস্বরূপ গোল্ডেন বল জিতেছেন আর্জেন্টাইন অধিনায়কই। অন্যদিকে পুরো টুর্নামেন্টের পর ফাইনালেও পুরো ম্যাচে দুর্দান্ত কিছু সেভসহ টাইব্রেকারেও চোখ ধাঁধানো পারফরম্যান্সে গোল্ডেন গ্লাভস জিতেছেন আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ।