ঢাকা , রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মাধবপুরে বীর মুক্তিযোদ্ধা শম্ভু পাল খাসের জমি বরাদ্দ না পাওয়ায় আক্ষেপ নিয়ে মারা গেলেন

স্বপন রবি দাশ, হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি
  • প্রকাশের সময় : ১০:৩২:০৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • / ২৩৯ বার পড়া হয়েছে
print news
20

হবিগঞ্জের মাধবপুরে উপজেলায় সরকারী খাসের জায়গা বরাদ্দের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বহুবার আবেদন করার পর ও এক টুকরো খাস জমি বরাদ্দ না পাওয়ায় বেদনা বুকে নিয়ে ভাড়া বাসাতেই মারা গেলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা শম্ভু চন্দ্র পাল।

0pgwf5U
0pgwf5U
0pgwf5U
0pgwf5U
0pgwf5U
0pgwf5U

নানান জটিল রোগে ভুগে গত রাতে পৌর এলাকার নোয়াগাঁওয়ে ভাড়া বাসায় মারা যাওয়ার পর শুক্রবার (৩ফেব্রুয়ারি) সকালে নোয়াগাঁও মহাশ্মশানে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। এর আগে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধা শম্ভু চন্দ্র পালের শবদেহে পুস্পস্তব অর্পণ করে গভীর শ্রদ্ধা জানান উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনজুর আহ্সান ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদর্শন করা হয়।

0pgwf5U
0pgwf5U
0pgwf5U
0pgwf5U
0pgwf5U
0pgwf5U

অনুসন্ধানে জানা যায় মাধবপুর পৌরসভার ০২নং ওয়ার্ডের রায়পাড়ায় জন্ম ও বেড়ে উঠা শম্ভু চন্দ্র পালের। মহান মুক্তিযুদ্ধের দেশ মাতৃকার টানে সশস্ত্র যুদ্ধ করেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা।মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের ইস্যুকৃত সাময়িক সনদপত্রে শম্ভু চন্দ্র পালের স্মারক নং -হবিগঞ্জ ৫৭-৫২৮। তার স্ত্রী নিশা রাণী পালের সাথে কথা বলে জানা যায়, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে শম্ভু চন্দ্র পাল মাধবপুর বাজারে একটি ছোট চায়ের দোকান পরিচালনা শুরু করেন। এই দোকানের সামান্য আয়ে সংসার চালানো দুঃসাধ্য হওয়ায় ধীরে ধীরে অনেক টাকা ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েন

0pgwf5U
0pgwf5U
0pgwf5U
0pgwf5U
0pgwf5U
0pgwf5U

১৯৯৫ সালে এক ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে মাধবপুর বাজারের ব্যাপক ক্ষতি হয়। পুড়ে যায় বহু দোকানপাট। শম্ভু পালের চায়ের দোকানটিও সেই সাথে পুড়ে যায়। পুড়ে যায় শম্ভুর কপালও। একমাত্র সম্বল ৩ শতাংশ পরিমান বসতভিটার জায়গা বিক্রী করে ধারদেনা শোধ দিয়ে স্ত্রী নিশা রাণী পাল ও ২ পুত্র সুশান্ত পাল এবং প্রশান্ত পালকে সাথে নিয়ে রাজধানী ঢাকায় পাড়ি জমান। একটি পোষাক তৈরীর কারখানায় দারোয়ানের চাকুরী নেন। পরিবার নিয়ে উঠেন এক বস্তিতে।

0pgwf5U
0pgwf5U
0pgwf5U
0pgwf5U
0pgwf5U
0pgwf5U

কায়ক্লেশে সংসার চালাতে থাকেন। আর্থিক অনটনে ছেলেদের লেখাপড়াও করাতে পারেননি। এরমধ্যেই শরীরে নানা রোগ বাসা বাঁধতে থাকে। ১৪ বছর দারোয়ানের চাকুরী করার পর ২০১৯ সালে নিজ এলাকায় ফিরে পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের নোয়াঁগাওয়ে ৪ হাজার টাকা ভাড়ায় ২কামড়ার একটি ছোট ভাড়া বাসায় উঠেন। সরকার থেকে পাওয়া মুক্তিযোদ্ধা ভাতার বেশীরভাগই তার চিকিৎসা বাবদ খরচ করতে হতো। এজমা সহ নানা রোগে ভোগে ০৩বছর আগে একবার স্ট্রোক করেন শম্ভু পাল। সেসময় বহু টাকা খরচ হয় তার চিকিৎসার পেছনে। অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে বেশ কয়েকবার সরকারী খাস জমি বরাদ্ধ পাওয়ার জন্য আবেদন করেন।

0pgwf5U
0pgwf5U
0pgwf5U
0pgwf5U
0pgwf5U
0pgwf5U

স্থানীয় সংসদ সদস্য ও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট মোঃ মাহবুব আলী শম্ভু চন্দ্র পালের আবেদনে সুপারিশ করেন। কিন্তু তার ভাগ্যে খাস জমির শিকে ছিঁড়েনি। তিনি বরাদ্ধ পাননি কোন খাসের জমি। অবশেষে ৭২ বছর বয়সে গতরাতে মৃত্যুবরণ করেছেন শম্ভু চন্দ্র পাল। শম্ভু চন্দ্র পালের ছেলে প্রশান্ত পাল নোয়াগাঁও মহাশ্মশানে বসে এ প্রতিনিধির সাথে আলাপকালে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন,কত মানুষ খাসের জায়গার বরাদ্ধ পায়।

0pgwf5U
0pgwf5U
0pgwf5U
0pgwf5U
0pgwf5U
0pgwf5U

আমার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা কি অপরাধ করেছিল? আমাদের দুই ভাইয়ের লেখাপড়া নামমাত্র। তেমন কাজও শিখি নাই। পুঁজির অভাবে ব্যবসা করবো সেই সুযোগও নাই।শম্ভু পালের ছেলেরা বলেন কিভাবে যে আমরা বেঁচে থাকবো বিধবা মা আর বউ বাচ্চা নিয়ে।

ট্যাগস :

এই নিউজটি শেয়ার করুন

মাধবপুরে বীর মুক্তিযোদ্ধা শম্ভু পাল খাসের জমি বরাদ্দ না পাওয়ায় আক্ষেপ নিয়ে মারা গেলেন

প্রকাশের সময় : ১০:৩২:০৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
print news
20

হবিগঞ্জের মাধবপুরে উপজেলায় সরকারী খাসের জায়গা বরাদ্দের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বহুবার আবেদন করার পর ও এক টুকরো খাস জমি বরাদ্দ না পাওয়ায় বেদনা বুকে নিয়ে ভাড়া বাসাতেই মারা গেলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা শম্ভু চন্দ্র পাল।

0pgwf5U
0pgwf5U
0pgwf5U
0pgwf5U
0pgwf5U
0pgwf5U

নানান জটিল রোগে ভুগে গত রাতে পৌর এলাকার নোয়াগাঁওয়ে ভাড়া বাসায় মারা যাওয়ার পর শুক্রবার (৩ফেব্রুয়ারি) সকালে নোয়াগাঁও মহাশ্মশানে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। এর আগে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধা শম্ভু চন্দ্র পালের শবদেহে পুস্পস্তব অর্পণ করে গভীর শ্রদ্ধা জানান উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনজুর আহ্সান ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদর্শন করা হয়।

0pgwf5U
0pgwf5U
0pgwf5U
0pgwf5U
0pgwf5U
0pgwf5U

অনুসন্ধানে জানা যায় মাধবপুর পৌরসভার ০২নং ওয়ার্ডের রায়পাড়ায় জন্ম ও বেড়ে উঠা শম্ভু চন্দ্র পালের। মহান মুক্তিযুদ্ধের দেশ মাতৃকার টানে সশস্ত্র যুদ্ধ করেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা।মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের ইস্যুকৃত সাময়িক সনদপত্রে শম্ভু চন্দ্র পালের স্মারক নং -হবিগঞ্জ ৫৭-৫২৮। তার স্ত্রী নিশা রাণী পালের সাথে কথা বলে জানা যায়, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে শম্ভু চন্দ্র পাল মাধবপুর বাজারে একটি ছোট চায়ের দোকান পরিচালনা শুরু করেন। এই দোকানের সামান্য আয়ে সংসার চালানো দুঃসাধ্য হওয়ায় ধীরে ধীরে অনেক টাকা ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েন

0pgwf5U
0pgwf5U
0pgwf5U
0pgwf5U
0pgwf5U
0pgwf5U

১৯৯৫ সালে এক ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে মাধবপুর বাজারের ব্যাপক ক্ষতি হয়। পুড়ে যায় বহু দোকানপাট। শম্ভু পালের চায়ের দোকানটিও সেই সাথে পুড়ে যায়। পুড়ে যায় শম্ভুর কপালও। একমাত্র সম্বল ৩ শতাংশ পরিমান বসতভিটার জায়গা বিক্রী করে ধারদেনা শোধ দিয়ে স্ত্রী নিশা রাণী পাল ও ২ পুত্র সুশান্ত পাল এবং প্রশান্ত পালকে সাথে নিয়ে রাজধানী ঢাকায় পাড়ি জমান। একটি পোষাক তৈরীর কারখানায় দারোয়ানের চাকুরী নেন। পরিবার নিয়ে উঠেন এক বস্তিতে।

0pgwf5U
0pgwf5U
0pgwf5U
0pgwf5U
0pgwf5U
0pgwf5U

কায়ক্লেশে সংসার চালাতে থাকেন। আর্থিক অনটনে ছেলেদের লেখাপড়াও করাতে পারেননি। এরমধ্যেই শরীরে নানা রোগ বাসা বাঁধতে থাকে। ১৪ বছর দারোয়ানের চাকুরী করার পর ২০১৯ সালে নিজ এলাকায় ফিরে পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের নোয়াঁগাওয়ে ৪ হাজার টাকা ভাড়ায় ২কামড়ার একটি ছোট ভাড়া বাসায় উঠেন। সরকার থেকে পাওয়া মুক্তিযোদ্ধা ভাতার বেশীরভাগই তার চিকিৎসা বাবদ খরচ করতে হতো। এজমা সহ নানা রোগে ভোগে ০৩বছর আগে একবার স্ট্রোক করেন শম্ভু পাল। সেসময় বহু টাকা খরচ হয় তার চিকিৎসার পেছনে। অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে বেশ কয়েকবার সরকারী খাস জমি বরাদ্ধ পাওয়ার জন্য আবেদন করেন।

0pgwf5U
0pgwf5U
0pgwf5U
0pgwf5U
0pgwf5U
0pgwf5U

স্থানীয় সংসদ সদস্য ও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট মোঃ মাহবুব আলী শম্ভু চন্দ্র পালের আবেদনে সুপারিশ করেন। কিন্তু তার ভাগ্যে খাস জমির শিকে ছিঁড়েনি। তিনি বরাদ্ধ পাননি কোন খাসের জমি। অবশেষে ৭২ বছর বয়সে গতরাতে মৃত্যুবরণ করেছেন শম্ভু চন্দ্র পাল। শম্ভু চন্দ্র পালের ছেলে প্রশান্ত পাল নোয়াগাঁও মহাশ্মশানে বসে এ প্রতিনিধির সাথে আলাপকালে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন,কত মানুষ খাসের জায়গার বরাদ্ধ পায়।

0pgwf5U
0pgwf5U
0pgwf5U
0pgwf5U
0pgwf5U
0pgwf5U

আমার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা কি অপরাধ করেছিল? আমাদের দুই ভাইয়ের লেখাপড়া নামমাত্র। তেমন কাজও শিখি নাই। পুঁজির অভাবে ব্যবসা করবো সেই সুযোগও নাই।শম্ভু পালের ছেলেরা বলেন কিভাবে যে আমরা বেঁচে থাকবো বিধবা মা আর বউ বাচ্চা নিয়ে।