ঢাকা , শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসে মৌলভীবাজারে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত দেশের নির্বাচন নির্বাসনে চলে গেছে; নাসের রহমান বাংলাদেশ উদাচী শিল্পীগোষ্ঠী বেলাব থানা শাখার আয়োজনে বাংলা নববর্ষ পালিত ওয়েবসাইট তৈরিতে ৫০ শতাংশ ছাড় দিচ্ছে খন্দকার আইটি বেড়াতে এসে প্রবাসে ফেরা হলো না ফাহমিদার পর্যটন নগরী শ্রীমঙ্গলে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত বাসকপ নবীনগর শাখার উদ্যোগে আলোচনাসভা ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত মনোহরদীতে মৃত ব্যক্তিদের মাগফেরাত কামনায় দোয়া ও ইফতার মাহফিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রয়াত সাংবাদিকদের স্বরণে আলোচনা সভা, ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হাল্টপ্রাইজ বোস্টন সামিটে যাবে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়

“জিপিএ-৫ পেল চায়ের ফেরিওয়ালা”

রিপু
  • প্রকাশের সময় : ০৫:০১:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ নভেম্বর ২০২২
  • / ২৬৫ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিদিনের পোস্ট || জিপিএ-৫ পেল চায়ের ফেরিওয়ালা|

সকাল বেলা ঘুম ভাঙতে না ভাঙতেই চায়ের ফ্লাক্স হাতে নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে ঘুরে চা বিক্রি করা তার পেশা। আর পেশাই বা হবে না কেন? যে বয়সে তার বই-খাতা হাতে নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা ঠিক সেই মুহূর্তে অভাব নামের করাঘাত চেপে বসেছে তার কাঁধে।

তাই বাধ্য হয়েই সংসার চালাতে বই-খাতার পরিবর্তে ঘুম থেকে উঠে সন্ধ্যা পর্যন্ত চায়ের ফ্লাক্স হাতে নিয়ে রাস্তায় ঘুরে ঘুরে চা বিক্রি করে তার সংসার চলে। সেই চা বিক্রেতা সৌরভ কুমার শীল নাটোরের সিংড়া দমদমা পাইলট স্কুল থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন এ-প্লাস পেয়েছে।

বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তার রাস্তায় ঘুরে ঘুরে চা বিক্রি ও বসবাসের ভাঙা কুড়ে ঘরের কয়েকটি ছবি ভাইরাল হয়েছে। সেখানে তার জীবনযুদ্ধে হার না মানার গল্প ফুটে উঠেছে।

বুধবার দুপুর ১টায় সিংড়া পৌর শহরের বাস টার্মিনাল এলাকায় গিয়ে সেই মেধাবী শিক্ষার্থী সৌরভ কুমার শীলকে ফ্লাক্স হাতে নিয়ে ঘুরে ঘুরে চা বিক্রি করতে দেখা যায়।

সৌরভ কুমার শীল এই প্রতিবেদককে জানান, অভাব-অনাটনের মধ্যে ছোট্ট একটি কুড়েঘরে তার জন্ম। তার বাবা শ্যামল কুমার শীল রাস্তায় ঘুরে ঘুরে চা বিক্রি করে সংসার চালাতেন। আর তার ছোটবেলা থেকেই অন্যের ধার করা বই-খাতা নিয়ে পড়াশোনা শুরু হয়। কিন্তু হঠাৎ তার বাবা ডায়বেটিস, পেসার ও কিডনি সমস্যায় আক্রান্ত হন। তারপর সংসারের বোঝা তার কাঁধে তুলে নিতে হয়। প্রায় ৫ বছর ধরে বাবার চা বিক্রির ফ্লাক্স হাতে নিয়ে সারাদিন রাস্তায় ঘুরে ঘুরে চা বিক্রি করেন। তবে রাত হলেই অন্যের ধার করা বই দিয়ে তার জীবনযুদ্ধ শুরু হয় পড়ার টেবিলে। এখন তার জীবনযুদ্ধের সঙ্গী অসুস্থ বাবা।

বাবা-মা আর প্রতিবেশী স্থানীয় পরিবেশ কর্মী হাসান ইমামের সহযোগিতায় এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণে তার এই সাফল্য। এখন স্বপ্ন উচ্চ শিক্ষা নিয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করা। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণ কিভাবে হবে সেই ভাবনা এখন তার ও বাবা-মার চোখে-মুখে।

প্রতিবেশী স্থানীয় পরিবেশ কর্মী হাসান ইমাম বলেন, শিক্ষার্থী সৌরভ কুমার শীলের জীবনযুদ্ধ একটা বাস্তব ঘটনা। তার পাশে সমাজের বিত্তশালীদের এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

সৌরভ কুমার শীলের মা স্বপ্না রাণী শীল বলেন, তাদের কোনো জায়গা-জমি নেই। সরকারি জায়গা ছোট্ট একটি ভাঙা কুড়েঘরে তাদের ঠাঁই। আর একটু খানি বৃষ্টি হলেই সেখানে থাকা বড় দায়। ছেলের কথা ভেবে তিনি অন্যের বাড়িতে দেড়শ টাকায় দিনমজুরি করেন। এখন একদিকে সংসার আর অন্যদিকে ছেলের লেখাপড়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

সিংড়া উপজেলার সিনিয়র সাংবাদিক শারফুল ইসলাম খোকন বলেন, সন্ধ্যা হলেই ছেলেটিকে চায়ের ফ্লাক্স হাতে প্রতিদিন চলনবিল গেট এলাকায় দেখা যায়। কখনো বুঝতেও পারেনি এমন একজন মেধাবী ছেলে চা ফেরি করে।

সিংড়া দমদমা পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলাম আনু বলেন, খুবই মেধাবী একটি ছেলে সৌরভ কুমার শীল। তার শিক্ষকরা তার অভাবের খবর জানার পর তাকে সব রকম সহযোগিতা করেছে। আর সারাদিন চা বিক্রির পর শুধু রাতে লেখাপড়া করে গোল্ডেন এ-প্লাস অর্জন এটা আমাদের গর্বের বিষয়

এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ । রিপু /প্রতিদিনের পোস্ট

এই নিউজটি শেয়ার করুন

x

“জিপিএ-৫ পেল চায়ের ফেরিওয়ালা”

প্রকাশের সময় : ০৫:০১:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ নভেম্বর ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিদিনের পোস্ট || জিপিএ-৫ পেল চায়ের ফেরিওয়ালা|

সকাল বেলা ঘুম ভাঙতে না ভাঙতেই চায়ের ফ্লাক্স হাতে নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে ঘুরে চা বিক্রি করা তার পেশা। আর পেশাই বা হবে না কেন? যে বয়সে তার বই-খাতা হাতে নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা ঠিক সেই মুহূর্তে অভাব নামের করাঘাত চেপে বসেছে তার কাঁধে।

তাই বাধ্য হয়েই সংসার চালাতে বই-খাতার পরিবর্তে ঘুম থেকে উঠে সন্ধ্যা পর্যন্ত চায়ের ফ্লাক্স হাতে নিয়ে রাস্তায় ঘুরে ঘুরে চা বিক্রি করে তার সংসার চলে। সেই চা বিক্রেতা সৌরভ কুমার শীল নাটোরের সিংড়া দমদমা পাইলট স্কুল থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন এ-প্লাস পেয়েছে।

বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তার রাস্তায় ঘুরে ঘুরে চা বিক্রি ও বসবাসের ভাঙা কুড়ে ঘরের কয়েকটি ছবি ভাইরাল হয়েছে। সেখানে তার জীবনযুদ্ধে হার না মানার গল্প ফুটে উঠেছে।

বুধবার দুপুর ১টায় সিংড়া পৌর শহরের বাস টার্মিনাল এলাকায় গিয়ে সেই মেধাবী শিক্ষার্থী সৌরভ কুমার শীলকে ফ্লাক্স হাতে নিয়ে ঘুরে ঘুরে চা বিক্রি করতে দেখা যায়।

সৌরভ কুমার শীল এই প্রতিবেদককে জানান, অভাব-অনাটনের মধ্যে ছোট্ট একটি কুড়েঘরে তার জন্ম। তার বাবা শ্যামল কুমার শীল রাস্তায় ঘুরে ঘুরে চা বিক্রি করে সংসার চালাতেন। আর তার ছোটবেলা থেকেই অন্যের ধার করা বই-খাতা নিয়ে পড়াশোনা শুরু হয়। কিন্তু হঠাৎ তার বাবা ডায়বেটিস, পেসার ও কিডনি সমস্যায় আক্রান্ত হন। তারপর সংসারের বোঝা তার কাঁধে তুলে নিতে হয়। প্রায় ৫ বছর ধরে বাবার চা বিক্রির ফ্লাক্স হাতে নিয়ে সারাদিন রাস্তায় ঘুরে ঘুরে চা বিক্রি করেন। তবে রাত হলেই অন্যের ধার করা বই দিয়ে তার জীবনযুদ্ধ শুরু হয় পড়ার টেবিলে। এখন তার জীবনযুদ্ধের সঙ্গী অসুস্থ বাবা।

বাবা-মা আর প্রতিবেশী স্থানীয় পরিবেশ কর্মী হাসান ইমামের সহযোগিতায় এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণে তার এই সাফল্য। এখন স্বপ্ন উচ্চ শিক্ষা নিয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করা। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণ কিভাবে হবে সেই ভাবনা এখন তার ও বাবা-মার চোখে-মুখে।

প্রতিবেশী স্থানীয় পরিবেশ কর্মী হাসান ইমাম বলেন, শিক্ষার্থী সৌরভ কুমার শীলের জীবনযুদ্ধ একটা বাস্তব ঘটনা। তার পাশে সমাজের বিত্তশালীদের এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

সৌরভ কুমার শীলের মা স্বপ্না রাণী শীল বলেন, তাদের কোনো জায়গা-জমি নেই। সরকারি জায়গা ছোট্ট একটি ভাঙা কুড়েঘরে তাদের ঠাঁই। আর একটু খানি বৃষ্টি হলেই সেখানে থাকা বড় দায়। ছেলের কথা ভেবে তিনি অন্যের বাড়িতে দেড়শ টাকায় দিনমজুরি করেন। এখন একদিকে সংসার আর অন্যদিকে ছেলের লেখাপড়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

সিংড়া উপজেলার সিনিয়র সাংবাদিক শারফুল ইসলাম খোকন বলেন, সন্ধ্যা হলেই ছেলেটিকে চায়ের ফ্লাক্স হাতে প্রতিদিন চলনবিল গেট এলাকায় দেখা যায়। কখনো বুঝতেও পারেনি এমন একজন মেধাবী ছেলে চা ফেরি করে।

সিংড়া দমদমা পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলাম আনু বলেন, খুবই মেধাবী একটি ছেলে সৌরভ কুমার শীল। তার শিক্ষকরা তার অভাবের খবর জানার পর তাকে সব রকম সহযোগিতা করেছে। আর সারাদিন চা বিক্রির পর শুধু রাতে লেখাপড়া করে গোল্ডেন এ-প্লাস অর্জন এটা আমাদের গর্বের বিষয়

এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ । রিপু /প্রতিদিনের পোস্ট