ঢাকা , শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পুত্রবধূর উপর অমানবিক নির্যাতনে পাষন্ড শশুরকে অবশেষে গ্রেপ্তার

প্রতিনিধির নাম
  • প্রকাশের সময় : ০২:৫০:৩৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৩
  • / ১৮৯ বার পড়া হয়েছে

তিমির বনিক,মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:

গতকাল সোমবার সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় এক গৃহবধূ নির্যাতনের ভিডিও ভাইরালের ঘটনায় ২৪ ঘন্টার মধ্যে নির্যাতিত গৃহবধূর শ্বশুর শফিক মিয়া (৬৩) ও স্বামী আব্দুস সালাম (৩২) কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গতকাল বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকা এবং সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের গৃহবধূর শ্বশুর মোঃ সফিক মিয়া (৬৩) তার পুত্রবধুকে অশ্লীল গালি-গালাজ করে মারধর করতে করতে টেনে হিচড়ে বাড়ির উঠান থেকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।
আজ মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) পরবর্তীতে ভিকটিমের বড়ভাই বাবুল মিয়া এই ঘটনায় কুলাউড়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন। সেখানে তিনি জানান, গত প্রায় ৪ (চার) বছর আগে ভিকটিম রুজিনা বেগমকে উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের শফিক মিয়ার ছেলে আব্দুস সালামের নিকট বিয়ে দেয়া হয়। বিয়ের পর তাদের সংসারে ১ (এক)টি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। বিয়ের পর থেকেই ভিকটিমের স্বামী আব্দুস সালাম যৌতুকের জন্য ভিকটিমকে শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার করতে থাকে। ভিকটিমের পরিবার আর্থিকভাবে দুর্বল হওয়ার কারনে যৌতুকের দাবী পূরন করতে পারেনি।
ভিকটিমের ভাই বাবুল মিয়া জানান,গত (১৬ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৯টায় সুলতানপুর ভিকটিমের শ্বশুর বাড়িতে ইফতারের শরবতের প্যাকেট কাটাকে কেন্দ্র করে ভিকটিমের সাথে ভিকটিমের স্বামী আব্দুস সালাম ও তার দেবর রুমান মিয়ার কথা কাটাকাটি হয়। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ভিকটিম রুজিনা বেগমকে তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন এলোপাতাড়ি মারধর করে। এর পরের দিন সকাল অনুমান সাড়ে ৬ টার দিকে ভিকটিমকে তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন যৌতুক বাবদ ১ (এক) লক্ষ টাকা আনার জন্য দিতে বলে। ভিকটিম যৌতুকের টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাকে এলাপাতাড়ি মারধর করতে থাকে। ভিকটিম প্রাণের ভয়ে প্রতিবেশী জ্যোৎস্মা বেগমের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিলে তার শ্বশুর এবং স্বামী জ্যোৎস্না বেগমের বাড়িতে গিয়ে ভিকটিমকে অশ্লীল ভাষায় গালি-গালাজ করে চুলের মুঠি ধরে মাটিতে ফেলে টেনে-হিচড়ে তার শ্বশুর বাড়িতে নিয়ে যায়। এ সংবাদ পেয়ে ভিকটিমের ভাই এবং আত্মীয়স্বজন ভিকটিমকে উদ্ধার করতে গেলে ভিকটিমের শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাদেরকে গালি-গালাজ করে তাদেরকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। পরবর্তীতে কুলাউড়া থানার এসআই হারুনুর রশিদ সঙ্গীয় অফিসার ও ফোর্সসহ ঘটনাস্থল থেকে ভিকটিমকে উদ্ধার করে কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এসে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।
১৭ এপ্রিল রাত আড়াইটার দিকে সুলতানপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ভিকটিমের স্বামী আব্দুস সালামকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃত আসামী আব্দুস সালামকে আজ মঙ্গলবার সকালে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়। মঙ্গলবার সারাদিন ঘটনার মূল হোতা ভিকটিমের শ্বশুর মোঃ শফিক মিয়া(৬৩)কে গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় আসামী শফিক মিয়াকে মৌলভীবাজার সদরের একাটুনা গ্রামের তার মেয়ের জামাই শামসুল মিয়ার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ বিষয়ে সন্ধ্যার পর মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে গনমাধ্যমকর্মী সহ সকলের সহযোগিতায় এমন নির্মম নির্যাতনের প্রতিবাদ করায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ধন্যবাদ জানান।

ট্যাগস :

এই নিউজটি শেয়ার করুন

x

পুত্রবধূর উপর অমানবিক নির্যাতনে পাষন্ড শশুরকে অবশেষে গ্রেপ্তার

প্রকাশের সময় : ০২:৫০:৩৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৩

তিমির বনিক,মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:

গতকাল সোমবার সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় এক গৃহবধূ নির্যাতনের ভিডিও ভাইরালের ঘটনায় ২৪ ঘন্টার মধ্যে নির্যাতিত গৃহবধূর শ্বশুর শফিক মিয়া (৬৩) ও স্বামী আব্দুস সালাম (৩২) কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গতকাল বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকা এবং সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের গৃহবধূর শ্বশুর মোঃ সফিক মিয়া (৬৩) তার পুত্রবধুকে অশ্লীল গালি-গালাজ করে মারধর করতে করতে টেনে হিচড়ে বাড়ির উঠান থেকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।
আজ মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) পরবর্তীতে ভিকটিমের বড়ভাই বাবুল মিয়া এই ঘটনায় কুলাউড়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন। সেখানে তিনি জানান, গত প্রায় ৪ (চার) বছর আগে ভিকটিম রুজিনা বেগমকে উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের শফিক মিয়ার ছেলে আব্দুস সালামের নিকট বিয়ে দেয়া হয়। বিয়ের পর তাদের সংসারে ১ (এক)টি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। বিয়ের পর থেকেই ভিকটিমের স্বামী আব্দুস সালাম যৌতুকের জন্য ভিকটিমকে শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার করতে থাকে। ভিকটিমের পরিবার আর্থিকভাবে দুর্বল হওয়ার কারনে যৌতুকের দাবী পূরন করতে পারেনি।
ভিকটিমের ভাই বাবুল মিয়া জানান,গত (১৬ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৯টায় সুলতানপুর ভিকটিমের শ্বশুর বাড়িতে ইফতারের শরবতের প্যাকেট কাটাকে কেন্দ্র করে ভিকটিমের সাথে ভিকটিমের স্বামী আব্দুস সালাম ও তার দেবর রুমান মিয়ার কথা কাটাকাটি হয়। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ভিকটিম রুজিনা বেগমকে তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন এলোপাতাড়ি মারধর করে। এর পরের দিন সকাল অনুমান সাড়ে ৬ টার দিকে ভিকটিমকে তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন যৌতুক বাবদ ১ (এক) লক্ষ টাকা আনার জন্য দিতে বলে। ভিকটিম যৌতুকের টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাকে এলাপাতাড়ি মারধর করতে থাকে। ভিকটিম প্রাণের ভয়ে প্রতিবেশী জ্যোৎস্মা বেগমের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিলে তার শ্বশুর এবং স্বামী জ্যোৎস্না বেগমের বাড়িতে গিয়ে ভিকটিমকে অশ্লীল ভাষায় গালি-গালাজ করে চুলের মুঠি ধরে মাটিতে ফেলে টেনে-হিচড়ে তার শ্বশুর বাড়িতে নিয়ে যায়। এ সংবাদ পেয়ে ভিকটিমের ভাই এবং আত্মীয়স্বজন ভিকটিমকে উদ্ধার করতে গেলে ভিকটিমের শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাদেরকে গালি-গালাজ করে তাদেরকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। পরবর্তীতে কুলাউড়া থানার এসআই হারুনুর রশিদ সঙ্গীয় অফিসার ও ফোর্সসহ ঘটনাস্থল থেকে ভিকটিমকে উদ্ধার করে কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এসে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।
১৭ এপ্রিল রাত আড়াইটার দিকে সুলতানপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ভিকটিমের স্বামী আব্দুস সালামকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃত আসামী আব্দুস সালামকে আজ মঙ্গলবার সকালে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়। মঙ্গলবার সারাদিন ঘটনার মূল হোতা ভিকটিমের শ্বশুর মোঃ শফিক মিয়া(৬৩)কে গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় আসামী শফিক মিয়াকে মৌলভীবাজার সদরের একাটুনা গ্রামের তার মেয়ের জামাই শামসুল মিয়ার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ বিষয়ে সন্ধ্যার পর মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে গনমাধ্যমকর্মী সহ সকলের সহযোগিতায় এমন নির্মম নির্যাতনের প্রতিবাদ করায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ধন্যবাদ জানান।