ঢাকা , শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
আড়াই বছর পর বিজয়ী হলেন নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী বেলাবতে শামছুল হুদা রহমানীয়া মাহমুদীয়া দ্বীনিয়া মাদরাসার মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত ভয়ে ভীত প্রীতি উরাংয়ের পরিবারও নাগরিক সমাজের সুষ্ঠু তদন্তে বিচার দাবি কালীগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় এক নির্মাণ শ্রমিকের প্রাণ গেল ব্যাংকে টাকা নাই গ্ৰাহক সেবা থেকে বঞ্চিত; হয়রানির শিকার সাধারণ মানুষ মথুরাপুর লোকসভা কেন্দ্রের বামফ্রন্টকে জেতাতে কোমর বেঁধেছেন জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি শামসুল হুদা লস্কর কলেজছাত্র মামুন হত্যাকান্ডের প্রধান জুনেদ কারাগারে শ্রীমঙ্গলে অভ্যন্তরীন বোরো ধান সংগ্রহ অভিযানের উদ্বোধন;কৃষিমন্ত্রী ‘অনুমতি ছাড়া জন্ম দেয়ায়’ মা-বাবার বিরুদ্ধে মামলা! সুদের চক্রে ফেঁসে বিষপানে জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষিকার আত্মহত্যা

শূণ্য থেকে স্বাবলম্বী নাজিম উদ্দীন

প্রতিনিধির নাম
  • প্রকাশের সময় : ০৯:২২:০৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৪
  • / ৯০ বার পড়া হয়েছে

মো. আলমগীর হোসেন, নবীনগর: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে ফুটপাতে ১০ টাকা বেতনে চাকরি করা নাজিম উদ্দীন (৩৯) এখন নবীনগর বাজারের একজন সফল ব্যবসায়ী। এছাড়াও বাড়িতে করেছেন হাঁস-মুরগির ছোট্ট খামার। সে পৌর এলাকার আলীয়াবাদ গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে।

নাজিম উদ্দীন দুই বোনের মধ্যে ছোট ও ৩ ভাইয়ের মধ্যে বড় ছেলে। মাত্র ১৩ বছর বয়সে ঢাকার একটি বেকারিতে নাম মাত্র বেতন আর পেটে-ভাতের বিনিময়ে কাজে যোগ দিয়েছিলেন তিনি।

বাবার ধানের ব্যবসায় মন্দা আর এক মৌসুমের কারবারে হিমশিম খাওয়া পরিবারের হাল ধরতে পরিবারের বড় ছেলে হিসেবে জীবন সংগ্রামে যুদ্ধ করা মানুষটিই আজ অন্যান্য মানুষের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন। বাবার স্বল্প পূজিতে কোন রকমে চলতো তাদের সংসার।

জানা যায়, ১৯৯৯ সালে ঢাকা থেকে ফিরে নাজিম উদ্দিন তার ছোট ভাই যেখানে কাজ করত সেখানে তার ভাইয়ের বদলে নিজেই শুরু করেন ১০ টাকা বেতনের চাকরি। কখনো জেলা পরিষদ ডাক বাংলোর উত্তর পাশের কোনায়, কখনো সমবায় মার্কেটের সামনে আবার কখনো জেলা পরিষদ মার্কেটের পিছনে। এভাবেই দীর্ঘ দিন চলছিল তার ফুটপাতের ভাসমান দোকান ও ব্যবসায়ীক জীবন।

দৈনিক ১২০ থেকে ১৫০ টাকা বিক্রি করতেন সদাই-পাতি। ঠিক একই জায়গায় এখন দৈনিক ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা বিক্রি হয়। জেলা পরিষদ ডাক বাংলো মার্কেটে নিজের দোকানের পাশাপাশি ছোট ভাই মোহাম্মদ আলীর জন্য করেছেন স্পিড বোটঘাট সংলগ্ন ইসলাম মার্কেটে আরেকটি ভ্যারাইটিজ দোকান। বাহারী ভোগ্য পণ্য, কসমেটিকস, জনপ্রিয় পানীয় দেদারসে হয় বিক্রি।

নাজিম উদ্দীন জানান, আব্বার অল্প পূঁজিতে লাভও অল্প হতো, তাও এক সৃজনে। জমি বলতে ছিল আমাদের দেড় শতক বাড়ির জায়গা। ১৪ বছর বয়সে ১০ টাকা বেতনে পান-সিগারেটের ভাসমান দোকানে চাকরি করি। আল্লাহর রহমতে আম্মা-আব্বার দোয়ায় এখন আমরা ২ দোকানের মালিক। দেড় শতক জায়গা দিয়ে আমাদের তিন ভাইয়ের সংসার চলতো না এখন ১৫ শতক জমি কিনে বাড়ি করেছি। পত্তন-বর্গা নিয়ে ঘরের খোরাকি ফসলও করি।

চেষ্টা থাকলে উপায় হয়। আমাকে অনেকেই বুদ্ধি দিয়ে, অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছে সব সময়। তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। প্রথমে অন্যের ভাসমান দোকানে থাকলেও নিজেই শুরু করি ব্যবসা। আমি যখন ফুটপাতে ব্যবসা করি তখন সর্ব সাকুল্যে পূঁজি ছিল ৯৩৫ টাকা। আমার বোন রিজিয়ার বিয়ে হয়েছিল চট্টগ্রামে। তার স্বামীর নাম মহসিন। দুলা ভাই আর বোন বেশির ভাগ সময় আমাকে অনুপ্রেরণা দিতো। যখন নতুন কোন দোকান নিই, ব্যবসা শুরু করি তখন তারা আমাকে সাহায্য করতে ছুটে আসতো। তাদের ঋণ কখনো শোধ করতে পারবো না।

আব্বা প্রতিদিন আমাদের দুই ভাইয়ের জন্য দুপুরে খাবার নিয়ে আসে দোকানে। এর চেয়ে শান্তি আর কি আছে! হয়তো অনেকের কাছে আমি এখনো ছোট ব্যবসায়ী হতে পারি কিন্তু পুঁজি ছাড়া এ পর্যন্ত আসা অনেক কষ্টের, যা আমি কাউকে বুঝাতে পারবো না। যা পেয়েছি, আল্লাহর কাছে ইয়ানাফসি!

২০০৮ সালে আমি বিয়ে করি। প্রথমে ভয় পেয়েছিলাম। নতুন বউ, কেমন জানি হয়। এখন বরং ভাবি, একজন ভালো জীবনসঙ্গী পেয়েছি। আমার বোনরা মাঝে মধ্যে বেড়াতে আসে, সবাই মিলে এক সাথে থাকি। ভালো লাগে। স্বল্প ভাষী, মিশুক নাজিম উদ্দীন। ৪ কন্যা সন্তানের জনক। স্বপ্ন দেখেন মেয়েদের পড়াশোনা করিয়ে উচ্চতর ডিগ্রি ও বিয়ে-সাদির। গোপনে সাধ্য মতন চেষ্টা করেন অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। দোকানে আসা ভিক্ষুকদের জন্য আলাদা করে প্রতিদিন রেখে দেন ভাংতি টাকা। সবার সাথে হাসি-খুশি কথা বলা সাদাসিধে মানুষ হিসেবেই তিনি এলাকায় পরিচিত।

ট্যাগস :

এই নিউজটি শেয়ার করুন

x

শূণ্য থেকে স্বাবলম্বী নাজিম উদ্দীন

প্রকাশের সময় : ০৯:২২:০৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৪

মো. আলমগীর হোসেন, নবীনগর: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে ফুটপাতে ১০ টাকা বেতনে চাকরি করা নাজিম উদ্দীন (৩৯) এখন নবীনগর বাজারের একজন সফল ব্যবসায়ী। এছাড়াও বাড়িতে করেছেন হাঁস-মুরগির ছোট্ট খামার। সে পৌর এলাকার আলীয়াবাদ গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে।

নাজিম উদ্দীন দুই বোনের মধ্যে ছোট ও ৩ ভাইয়ের মধ্যে বড় ছেলে। মাত্র ১৩ বছর বয়সে ঢাকার একটি বেকারিতে নাম মাত্র বেতন আর পেটে-ভাতের বিনিময়ে কাজে যোগ দিয়েছিলেন তিনি।

বাবার ধানের ব্যবসায় মন্দা আর এক মৌসুমের কারবারে হিমশিম খাওয়া পরিবারের হাল ধরতে পরিবারের বড় ছেলে হিসেবে জীবন সংগ্রামে যুদ্ধ করা মানুষটিই আজ অন্যান্য মানুষের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন। বাবার স্বল্প পূজিতে কোন রকমে চলতো তাদের সংসার।

জানা যায়, ১৯৯৯ সালে ঢাকা থেকে ফিরে নাজিম উদ্দিন তার ছোট ভাই যেখানে কাজ করত সেখানে তার ভাইয়ের বদলে নিজেই শুরু করেন ১০ টাকা বেতনের চাকরি। কখনো জেলা পরিষদ ডাক বাংলোর উত্তর পাশের কোনায়, কখনো সমবায় মার্কেটের সামনে আবার কখনো জেলা পরিষদ মার্কেটের পিছনে। এভাবেই দীর্ঘ দিন চলছিল তার ফুটপাতের ভাসমান দোকান ও ব্যবসায়ীক জীবন।

দৈনিক ১২০ থেকে ১৫০ টাকা বিক্রি করতেন সদাই-পাতি। ঠিক একই জায়গায় এখন দৈনিক ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা বিক্রি হয়। জেলা পরিষদ ডাক বাংলো মার্কেটে নিজের দোকানের পাশাপাশি ছোট ভাই মোহাম্মদ আলীর জন্য করেছেন স্পিড বোটঘাট সংলগ্ন ইসলাম মার্কেটে আরেকটি ভ্যারাইটিজ দোকান। বাহারী ভোগ্য পণ্য, কসমেটিকস, জনপ্রিয় পানীয় দেদারসে হয় বিক্রি।

নাজিম উদ্দীন জানান, আব্বার অল্প পূঁজিতে লাভও অল্প হতো, তাও এক সৃজনে। জমি বলতে ছিল আমাদের দেড় শতক বাড়ির জায়গা। ১৪ বছর বয়সে ১০ টাকা বেতনে পান-সিগারেটের ভাসমান দোকানে চাকরি করি। আল্লাহর রহমতে আম্মা-আব্বার দোয়ায় এখন আমরা ২ দোকানের মালিক। দেড় শতক জায়গা দিয়ে আমাদের তিন ভাইয়ের সংসার চলতো না এখন ১৫ শতক জমি কিনে বাড়ি করেছি। পত্তন-বর্গা নিয়ে ঘরের খোরাকি ফসলও করি।

চেষ্টা থাকলে উপায় হয়। আমাকে অনেকেই বুদ্ধি দিয়ে, অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছে সব সময়। তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। প্রথমে অন্যের ভাসমান দোকানে থাকলেও নিজেই শুরু করি ব্যবসা। আমি যখন ফুটপাতে ব্যবসা করি তখন সর্ব সাকুল্যে পূঁজি ছিল ৯৩৫ টাকা। আমার বোন রিজিয়ার বিয়ে হয়েছিল চট্টগ্রামে। তার স্বামীর নাম মহসিন। দুলা ভাই আর বোন বেশির ভাগ সময় আমাকে অনুপ্রেরণা দিতো। যখন নতুন কোন দোকান নিই, ব্যবসা শুরু করি তখন তারা আমাকে সাহায্য করতে ছুটে আসতো। তাদের ঋণ কখনো শোধ করতে পারবো না।

আব্বা প্রতিদিন আমাদের দুই ভাইয়ের জন্য দুপুরে খাবার নিয়ে আসে দোকানে। এর চেয়ে শান্তি আর কি আছে! হয়তো অনেকের কাছে আমি এখনো ছোট ব্যবসায়ী হতে পারি কিন্তু পুঁজি ছাড়া এ পর্যন্ত আসা অনেক কষ্টের, যা আমি কাউকে বুঝাতে পারবো না। যা পেয়েছি, আল্লাহর কাছে ইয়ানাফসি!

২০০৮ সালে আমি বিয়ে করি। প্রথমে ভয় পেয়েছিলাম। নতুন বউ, কেমন জানি হয়। এখন বরং ভাবি, একজন ভালো জীবনসঙ্গী পেয়েছি। আমার বোনরা মাঝে মধ্যে বেড়াতে আসে, সবাই মিলে এক সাথে থাকি। ভালো লাগে। স্বল্প ভাষী, মিশুক নাজিম উদ্দীন। ৪ কন্যা সন্তানের জনক। স্বপ্ন দেখেন মেয়েদের পড়াশোনা করিয়ে উচ্চতর ডিগ্রি ও বিয়ে-সাদির। গোপনে সাধ্য মতন চেষ্টা করেন অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। দোকানে আসা ভিক্ষুকদের জন্য আলাদা করে প্রতিদিন রেখে দেন ভাংতি টাকা। সবার সাথে হাসি-খুশি কথা বলা সাদাসিধে মানুষ হিসেবেই তিনি এলাকায় পরিচিত।