ঢাকা , সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

“অপবিত্র জায়গায় জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ পড়া যাবে কি?”

প্রতিনিধির নাম
  • প্রকাশের সময় : ০৭:২৪:১৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ নভেম্বর ২০২২
  • / ২৮৮ বার পড়া হয়েছে

ধর্ম ডেস্ক || অপবিত্র জায়গায় জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ পড়া যাবে কি?।

আল্লাহতে বিশ্বাসী প্রত্যেক মুমিনের ওপর নামাজ ফরজ। পৃথিবীতে শ্বাস-প্রশ্বাস যতদিন থাকবে নামাজ ছাড়ার কোনও উপায়, বিধান নেই। নামাজ শুধু আল্লাহর বিধান নয়, প্রশান্তি লাভের মাধ্যম। পবিত্র কোরআনে নামাজে মনোযোগী হওয়ার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা সালাতের প্রতি যত্নবান হও, বিশেষ করে মধ্যবর্তী সালাতের প্রতি এবং আল্লাহর সামনে বিনীতভাবে দাঁড়াও।’ -(সুরা বাকারা, আয়াত : ২৩৮)

অন্য আয়াতে বিনয়ী ও মনোযোগী নামাজিদের সফল আখ্যায়িত করা হয়েছে। বর্ণিত হয়েছে, ‘অবশ্যই সফলকাম হয়েছে মুমিনরা, যারা নিজেদের নামাজে বিনয়-নম্র।’ -(সুরা মুমিনুন, আয়াত : ১-২)

রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করো, যেন তাঁকে তুমি দেখতে পাচ্ছ। আর যদি দেখতে না পাও, তবে (ভাবো) তিনি তোমাকে দেখতে পাচ্ছেন। ’ (বুখারি, হাদিস : ৫০; মুসলিম, হাদিস : ৮)

নামাজ বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য পবিত্রতা অর্জন অন্যতম প্রধান শর্ত। পবিত্রতা ছাড়া নামাজ হয় না। এজন্য কেউ অপবিত্র থাকলে নামাজের আগে তাকে পবিত্র হতে হয় অজুর মাধ্যমে। অথবা গোসল ফরজের কোনও কারণ ঘটলে গোসল করে নিতে হয়।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে মুমিনগণ, যখন তোমরা সালাতে দাঁড়াতে চাও, তখন তোমরা তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাতগুলো কনুই পর্যন্ত ধুয়ে নাও। তোমাদের মাথা মাসেহ করো এবং পায়ের টাখনু পর্যন্ত ধুয়ে নাও।’ (সুরা মায়েদা: ৬)

পারিপার্শিক অবস্থার কারণে অনেক সময় মানুষ নিজে পবিত্রতা অর্জন করলেও নামাজের জায়গা পবিত্র থাকে না বা পবিত্র জায়গা পাওয়া যায় না। অনেক বাসার ফ্লোরে শিশু, গৃহপালিত প্রাণীরা প্রস্রাব করে দেয়। তখন না জেনেই কেউ হয়তো তার ওপর জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ পড়ে ফেলে।

যেমন এমন একটি পরিস্থিতি নিয়ে একজন জানতে চেয়েছেন-

‘একদিন আমার ভাতিজা ঘরের মেঝেতে প্রস্রাব করে দেয়। ওর মা পরনের প্যান্ট দিয়েই ওই মেঝে হালকাভাবে মুছে দেয়। আমি খেয়াল না করে ওর ওপরই মোটা ও ভারী কার্পেট-জাতীয় জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ আদায় করি। নামাজ শেষে ভাইয়া বললেন, ও তো ওখানে প্রস্রাব করেছিল, তুমি তার ওপরই জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ পড়েছ।

আমি জায়নামাজ উল্টে দেখি, জায়নামাজের উল্টো পিঠে হালকা ভেজা আছে। আর প্রস্রাবের গন্ধ মোটামুটি স্পষ্ট। কিন্তু জায়নামাজের ওপর পিঠে কোনো গন্ধ নেই। প্রশ্ন হলো, ওই জায়নামাজে আমার নামাজ কি শুদ্ধ হয়েছে? -শরীয়তের দৃষ্টিতে এভাবে নামাজ পড়লে নামাজ হবে কিনা-বা এর বিধানই কী?

এ বিষয়ে ইসলামী আইন ও ফেকাহ শাস্ত্রবিদদের মতামত হলো, জায়নামাজ যদি এতোটা মোটা হয় যে জায়নামাজের এক পিঠের লাগা নাপাকি বা তার প্রভাব (রং, গন্ধ) জায়নামাজের কাপড়ের অপর পিঠে না পৌঁছে তাহলে বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী অপর পিঠের পবিত্রতা বহাল থাকবে। নিচের অংশের অপবিত্রতার কারণে তা নাপাক গণ্য হবে না।

তাই এমন পরিস্থিতিতে যদি জায়নামাজের ওপরের অংশে প্রস্রাবের আর্দ্রতা ও দুর্গন্ধ না পৌঁছায়, তাহলে এমন জায়নামাজের ওপর নামাজ শুদ্ধ হবে। আর জায়নামাজের অপর পিঠে নাপাকি বা তার প্রভাব (রং, গন্ধ) পৌঁছলে তাতে নামাজ পড়া যাবে না।

তবে আলেমরা বলেন, কোনো কোনো ফকিহের মতে মোটা কাপড়ের এক পিঠের নাপাকির প্রভাব অন্য পিঠে প্রকাশ না পেলেও তা নাপাক হয়ে যায়, তাই এই জায়নামাজ পবিত্র না করে তাতে নামাজ না পড়াই শ্রেয়। -(বাদায়েউস সানায়ে : ১/২৩৯; রদ্দুল মুহতার : ১/৬২৬)

এই নিউজটি শেয়ার করুন

x

“অপবিত্র জায়গায় জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ পড়া যাবে কি?”

প্রকাশের সময় : ০৭:২৪:১৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ নভেম্বর ২০২২

ধর্ম ডেস্ক || অপবিত্র জায়গায় জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ পড়া যাবে কি?।

আল্লাহতে বিশ্বাসী প্রত্যেক মুমিনের ওপর নামাজ ফরজ। পৃথিবীতে শ্বাস-প্রশ্বাস যতদিন থাকবে নামাজ ছাড়ার কোনও উপায়, বিধান নেই। নামাজ শুধু আল্লাহর বিধান নয়, প্রশান্তি লাভের মাধ্যম। পবিত্র কোরআনে নামাজে মনোযোগী হওয়ার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা সালাতের প্রতি যত্নবান হও, বিশেষ করে মধ্যবর্তী সালাতের প্রতি এবং আল্লাহর সামনে বিনীতভাবে দাঁড়াও।’ -(সুরা বাকারা, আয়াত : ২৩৮)

অন্য আয়াতে বিনয়ী ও মনোযোগী নামাজিদের সফল আখ্যায়িত করা হয়েছে। বর্ণিত হয়েছে, ‘অবশ্যই সফলকাম হয়েছে মুমিনরা, যারা নিজেদের নামাজে বিনয়-নম্র।’ -(সুরা মুমিনুন, আয়াত : ১-২)

রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করো, যেন তাঁকে তুমি দেখতে পাচ্ছ। আর যদি দেখতে না পাও, তবে (ভাবো) তিনি তোমাকে দেখতে পাচ্ছেন। ’ (বুখারি, হাদিস : ৫০; মুসলিম, হাদিস : ৮)

নামাজ বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য পবিত্রতা অর্জন অন্যতম প্রধান শর্ত। পবিত্রতা ছাড়া নামাজ হয় না। এজন্য কেউ অপবিত্র থাকলে নামাজের আগে তাকে পবিত্র হতে হয় অজুর মাধ্যমে। অথবা গোসল ফরজের কোনও কারণ ঘটলে গোসল করে নিতে হয়।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে মুমিনগণ, যখন তোমরা সালাতে দাঁড়াতে চাও, তখন তোমরা তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাতগুলো কনুই পর্যন্ত ধুয়ে নাও। তোমাদের মাথা মাসেহ করো এবং পায়ের টাখনু পর্যন্ত ধুয়ে নাও।’ (সুরা মায়েদা: ৬)

পারিপার্শিক অবস্থার কারণে অনেক সময় মানুষ নিজে পবিত্রতা অর্জন করলেও নামাজের জায়গা পবিত্র থাকে না বা পবিত্র জায়গা পাওয়া যায় না। অনেক বাসার ফ্লোরে শিশু, গৃহপালিত প্রাণীরা প্রস্রাব করে দেয়। তখন না জেনেই কেউ হয়তো তার ওপর জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ পড়ে ফেলে।

যেমন এমন একটি পরিস্থিতি নিয়ে একজন জানতে চেয়েছেন-

‘একদিন আমার ভাতিজা ঘরের মেঝেতে প্রস্রাব করে দেয়। ওর মা পরনের প্যান্ট দিয়েই ওই মেঝে হালকাভাবে মুছে দেয়। আমি খেয়াল না করে ওর ওপরই মোটা ও ভারী কার্পেট-জাতীয় জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ আদায় করি। নামাজ শেষে ভাইয়া বললেন, ও তো ওখানে প্রস্রাব করেছিল, তুমি তার ওপরই জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ পড়েছ।

আমি জায়নামাজ উল্টে দেখি, জায়নামাজের উল্টো পিঠে হালকা ভেজা আছে। আর প্রস্রাবের গন্ধ মোটামুটি স্পষ্ট। কিন্তু জায়নামাজের ওপর পিঠে কোনো গন্ধ নেই। প্রশ্ন হলো, ওই জায়নামাজে আমার নামাজ কি শুদ্ধ হয়েছে? -শরীয়তের দৃষ্টিতে এভাবে নামাজ পড়লে নামাজ হবে কিনা-বা এর বিধানই কী?

এ বিষয়ে ইসলামী আইন ও ফেকাহ শাস্ত্রবিদদের মতামত হলো, জায়নামাজ যদি এতোটা মোটা হয় যে জায়নামাজের এক পিঠের লাগা নাপাকি বা তার প্রভাব (রং, গন্ধ) জায়নামাজের কাপড়ের অপর পিঠে না পৌঁছে তাহলে বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী অপর পিঠের পবিত্রতা বহাল থাকবে। নিচের অংশের অপবিত্রতার কারণে তা নাপাক গণ্য হবে না।

তাই এমন পরিস্থিতিতে যদি জায়নামাজের ওপরের অংশে প্রস্রাবের আর্দ্রতা ও দুর্গন্ধ না পৌঁছায়, তাহলে এমন জায়নামাজের ওপর নামাজ শুদ্ধ হবে। আর জায়নামাজের অপর পিঠে নাপাকি বা তার প্রভাব (রং, গন্ধ) পৌঁছলে তাতে নামাজ পড়া যাবে না।

তবে আলেমরা বলেন, কোনো কোনো ফকিহের মতে মোটা কাপড়ের এক পিঠের নাপাকির প্রভাব অন্য পিঠে প্রকাশ না পেলেও তা নাপাক হয়ে যায়, তাই এই জায়নামাজ পবিত্র না করে তাতে নামাজ না পড়াই শ্রেয়। -(বাদায়েউস সানায়ে : ১/২৩৯; রদ্দুল মুহতার : ১/৬২৬)