ঢাকা , শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
বিজয়নগর উপজেলা নাগরিক ফোরামের আয়োজন ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত বিজয়নগরে লিচু বাগানে গাছের নিচে বস্তাভর্তি গাঁজা উদ্ধার নবীনগরে পুকুরে ডুবে দুই চাচাতো বোনের প্রাণ গেল ২৫ ইঞ্চি জীবিত কেঁচো মিললো পেটে বিভাগীয় ইনোভেশন শোকেসিংয়ে নবীনগর উপজেলা দ্বিতীয় কুলাউড়ায় স্ত্রী’কে অমানুষিক নির্যাতনের অভিযোগে স্বামী কারাগারে দাম কমিয়ে ৫৯৫ টাকায় গরুর মাংস বিক্রির ঘোষণা দিলেন খলিল মনোহরদীতে হাফেজ ছাত্রদের হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত বেলাবতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে সাংবাদিকদের মতবিনিময় শ্রীমঙ্গলে সরকারী জমি দখলের প্রতিবাদ করায় এলাকাবাসীর ওপর চাঁদাবাজির মামলা; সাংবাদিকদের ওপর চড়াও ডলি

“অবশেষে নয়াপল্টন থেকে সরে এলো বিএনপি”

  • রিপু
  • প্রকাশের সময় : ০৫:৪১:৫৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২২
  • ১৪১ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিদিনের পোস্ট || অবশেষে নয়াপল্টন থেকে সরে এলো বিএনপি|

অবশেষে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশের স্থানের সুরাহা হচ্ছে। নয়াপল্টন কিংবা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে সরে এসে বিকল্প স্থানে হবে এ কর্মসূচি।

বিএনপি ও পুলিশের পক্ষ থেকে কমলাপুর স্টেডিয়াম অথবা বাঙলা কলেজ মাঠ প্রস্তাব করা হয়েছে। দুটি মাঠ পরিদর্শন শেষে বিএনপি তাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে। সেই মতে পুলিশও বিকল্প স্থানের অনুমতি দিতে পারে।

তবে বিএনপির একাধিক নেতা জানান, কমলাপুর স্টেডিয়ামে সমাবেশ করার পক্ষে দলটি। নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে এ স্থানের দূরত্বও বেশি নয়।

এদিকে গণসমাবেশের অনুমতি, নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, গ্রেফতারসহ সার্বিক বিষয়ে অবহিত করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল।

বৃহস্পতিবার এ বৈঠক হয়। সন্ধ্যা সাতটায় ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের কার্যালয়ে গিয়ে তার সঙ্গে বৈঠকে করেন তারা।

দুই ঘণ্টা পর রাত সাড়ে ৯টার দিকে সেখান থেকে বেরিয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু সাংবাদিকদের বলেন, নয়াপল্টনের বিকল্প হিসাবে রাজধানীর কমলাপুর স্টেডিয়াম ও বাঙলা কলেজ মাঠে সমাবেশের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। এছাড়া আরামবাগ ও সেন্ট্রাল রোডসহ কয়েকটি জায়গার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছিল। সেগুলো তারা আমলে নেয়নি।
তিনি আরও বলেন, নয়াপল্টনে বিএনপির গণসমাবেশ হচ্ছে না। তেমনিভাবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও আমরা যাব না।

পরে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপির সমাবেশস্থল নিয়ে সৃষ্ট দ্বন্দ্ব আগামীকালই (শুক্রবার) কেটে যাবে।

বৈঠক সূত্র জানায়, বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, কমলাপুর স্টেডিয়ামে কার্পেটসহ কোনো কিছুর ক্ষতি হলে তা দলের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ দিয়ে দেওয়া হবে। এ সময় পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, কমলাপুর স্টেডিয়াম ক্রীড়া পরিষদের অধীনে। তাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। বৈঠক চলাকালেই ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ও ক্রীড়া সচিবকে ফোন করা হয়।

বৈঠক শেষে বিএনপি প্রতিনিধি দল স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের বাসায় যান। সেখানে তারা লন্ডনে অবস্থানরত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলে বিকল্প স্থানের বিষয়টি চূড়ান্ত করবেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনেই হবে বিভাগীয় গণসমাবেশ। বিকল্প গ্রহণযোগ্য প্রস্তাব পেলে বিবেচনা করা হবে। তবে সরকার ও পুলিশের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে-নয়াপল্টনের সড়কে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না। কেউ সেখানে জড়ো হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে সারা দেশ থেকে নেতাকর্মীদের রাজধানীতে প্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। ঢাকায় আসতে নানা বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন তারা। শহরে প্রত্যেকটি প্রবেশপথে বসানো হয়েছে পুলিশের চেকপোস্ট। তল্লাশি করে কাউকে সন্দেহ হলে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে পুলিশি তল্লাশি এড়িয়ে কৌশলে ঢাকায় ঢুকছেন অনেকে।

বিএনপির একাধিক নেতা  বলেন, তারা ঢাকায় বিভাগীয় গণসমাবেশ করবেই। এতে পুলিশ বাধা দেবে, ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরাও ওইদিন মাঠে থাকবে-এমনটা ধরে নিয়েই তারা প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং সেভাবেই মাঠে থাকবে। সমাবেশস্থলে যেতে বাধা দিলে নেতাকর্মীরাও প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করবে। কিন্তু বাধার ভয়ে তারা ঘরে বসে থাকবে না। শনিবার ঢাকার বিভাগীয় গণসমাবেশে বাধা দেওয়া হলে তাৎক্ষণিকভাবে সারা দেশে বিক্ষোভ করা হবে বলেও জানান ওই নেতারা।

এদিকে পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের পর বৃহস্পতিবার সারাদিন অবরুদ্ধ ছিল নয়াপল্টন ও আশপাশের এলাকা। বন্ধ ছিল যান চলাচল। রাজধানীর ব্যস্ততম এ সড়কটি বন্ধ থাকায় আশপাশের রাস্তায় সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। সকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কার্যালয়ে যেতে চাইলে নাইটিঙ্গেল মোড়ে তাকে আটকে দেয় পুলিশ।

দলের সবশেষ অবস্থান তুলে ধরতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন মির্জা ফখরুল। সেখানে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, এজেডএম জাহিদ হোসেন, কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, জহির উদ্দিন স্বপন, জিএম সিরাজ, তাইফুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

দলের কার্যালয় পুলিশ ঘিরে রেখেছে, এ অবস্থায় কীভাবে সেখানে সমাবেশ হবে-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘১০ ডিসেম্বর আমরা সেখানে যাব। এরপর জনগণই ঠিক করবে কী হবে। অপেক্ষা করুন ঢাকায় যা হবে তা আপনারা নিজেরা স্বচক্ষে দেখবেন।’ তিনি বলেন, আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট-আমরা সমাবেশ করবই। এজন্য নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুমতি চেয়েছিলাম। এখন সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে সেটা যাতে শান্তিপূর্ণভাবে হয়। আমার অবশ্যই সমাবেশস্থলে যাব। ১০ ডিসেম্বর আমাদের বিভাগীয় সমাবেশের শেষ কর্মসূচি। এখান থেকে আমরা পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তারা যুগপৎভাবে এই আন্দোলনে থাকবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, নয়াপল্টনে পুলিশের এই জঘন্য, ন্যক্কারজনক, বর্বরোচিত হামলা সরকারের ফ্যাসিবাদী কর্তৃত্ববাদের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। এই ঘটনা প্রমাণ করে সরকার গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। তারা বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার সাংবিধানিক অধিকারও কেড়ে নিয়েছে। যা গণতন্ত্র, রাজনীতির জন্য অশনিসংকেত। এ ঘটনা গণতন্ত্রের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেওয়ার শামিল।

তিনি বলেন, আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। অফিসের কর্মচারীদেরও তারা গ্রেফতার করে। এরপর পুলিশ নিজেদের রেখে আসা বোমা উদ্ধার ও বিস্ফোরণ নামের নাটক সাজায়। শুধু পুলিশ নয়, পুলিশের সঙ্গে সোয়াত বাহিনী ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা এই সন্ত্রাসে নিয়োজিত ছিল। আর্জেন্টিনার ড্রেস পরেও গুলি করছে।

তিনি বলেন, পুলিশ বিএনপি অফিসে অযাচিতভাবে প্রবেশ করে নিচতলা থেকে ৬ তলা পর্যন্ত বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন কক্ষ তছনছ করে। এমনকি দলের চেয়ারপারসনের কক্ষ, মহাসচিবের কক্ষ, অফিস কক্ষের দরজা তারা অন্যায়ভাবে ভেঙে প্রবেশ করে এবং সব আসবাবপত্র, ফাইল, গুরুত্বপূর্ণ নথি তছনছ করে। তারা কম্পিউটার, ল্যাপটপ, হার্ডডিস্ক এমনকি দলীয় সদস্যদের প্রদেয় মাসিক চাঁদার টাকা, ব্যাংকের চেক বই, নির্বাচন কমিশন সংক্রান্তসহ সব গুরুত্বপূর্ণ নথি নিয়ে গেছে। ১৬০ বস্তা চাল উদ্ধার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা পুরোপুরি মিথ্যা। এত চাল রাখার জায়গা কোথায়। আর দুই লাখ বোতল রাখার জায়গাও সেখানে নেই।

১০ ডিসেম্বরকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের পাড়া-মহল্লায় পাহারা বসানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গণতন্ত্রের যে মূল কথা-সহনশীলতা এবং বিরোধী দলকে রাজনীতি করতে দেওয়া যেটা আমার সংবিধানসম্মত অধিকার-সেগুলোতে তারা বিশ্বাস করে না। তারা যে ভয় ও ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করে দেশ পরিচালনা করছে সেটা আরও স্পষ্ট হলো। ওবায়দুল কাদেরের (আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) কথা এবং ঢাকার ঘটনা থেকে এটা স্পষ্ট, এ হামলা একটা পরিকল্পিত প্লট, ১০ ডিসেম্বরের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ পণ্ড করতেই এটা তৈরি করা হয়েছে। যুগপৎ আন্দোলন প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা যুগপৎ আন্দোলন করব।

এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ । রিপু /প্রতিদিনের পোস্ট

Facebook Comments Box
জনপ্রিয়

বিজয়নগর উপজেলা নাগরিক ফোরামের আয়োজন ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত

“অবশেষে নয়াপল্টন থেকে সরে এলো বিএনপি”

প্রকাশের সময় : ০৫:৪১:৫৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিদিনের পোস্ট || অবশেষে নয়াপল্টন থেকে সরে এলো বিএনপি|

অবশেষে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশের স্থানের সুরাহা হচ্ছে। নয়াপল্টন কিংবা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে সরে এসে বিকল্প স্থানে হবে এ কর্মসূচি।

বিএনপি ও পুলিশের পক্ষ থেকে কমলাপুর স্টেডিয়াম অথবা বাঙলা কলেজ মাঠ প্রস্তাব করা হয়েছে। দুটি মাঠ পরিদর্শন শেষে বিএনপি তাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে। সেই মতে পুলিশও বিকল্প স্থানের অনুমতি দিতে পারে।

তবে বিএনপির একাধিক নেতা জানান, কমলাপুর স্টেডিয়ামে সমাবেশ করার পক্ষে দলটি। নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে এ স্থানের দূরত্বও বেশি নয়।

এদিকে গণসমাবেশের অনুমতি, নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, গ্রেফতারসহ সার্বিক বিষয়ে অবহিত করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল।

বৃহস্পতিবার এ বৈঠক হয়। সন্ধ্যা সাতটায় ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের কার্যালয়ে গিয়ে তার সঙ্গে বৈঠকে করেন তারা।

দুই ঘণ্টা পর রাত সাড়ে ৯টার দিকে সেখান থেকে বেরিয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু সাংবাদিকদের বলেন, নয়াপল্টনের বিকল্প হিসাবে রাজধানীর কমলাপুর স্টেডিয়াম ও বাঙলা কলেজ মাঠে সমাবেশের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। এছাড়া আরামবাগ ও সেন্ট্রাল রোডসহ কয়েকটি জায়গার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছিল। সেগুলো তারা আমলে নেয়নি।
তিনি আরও বলেন, নয়াপল্টনে বিএনপির গণসমাবেশ হচ্ছে না। তেমনিভাবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও আমরা যাব না।

পরে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপির সমাবেশস্থল নিয়ে সৃষ্ট দ্বন্দ্ব আগামীকালই (শুক্রবার) কেটে যাবে।

বৈঠক সূত্র জানায়, বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, কমলাপুর স্টেডিয়ামে কার্পেটসহ কোনো কিছুর ক্ষতি হলে তা দলের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ দিয়ে দেওয়া হবে। এ সময় পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, কমলাপুর স্টেডিয়াম ক্রীড়া পরিষদের অধীনে। তাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। বৈঠক চলাকালেই ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ও ক্রীড়া সচিবকে ফোন করা হয়।

বৈঠক শেষে বিএনপি প্রতিনিধি দল স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের বাসায় যান। সেখানে তারা লন্ডনে অবস্থানরত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলে বিকল্প স্থানের বিষয়টি চূড়ান্ত করবেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনেই হবে বিভাগীয় গণসমাবেশ। বিকল্প গ্রহণযোগ্য প্রস্তাব পেলে বিবেচনা করা হবে। তবে সরকার ও পুলিশের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে-নয়াপল্টনের সড়কে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না। কেউ সেখানে জড়ো হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে সারা দেশ থেকে নেতাকর্মীদের রাজধানীতে প্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। ঢাকায় আসতে নানা বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন তারা। শহরে প্রত্যেকটি প্রবেশপথে বসানো হয়েছে পুলিশের চেকপোস্ট। তল্লাশি করে কাউকে সন্দেহ হলে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে পুলিশি তল্লাশি এড়িয়ে কৌশলে ঢাকায় ঢুকছেন অনেকে।

বিএনপির একাধিক নেতা  বলেন, তারা ঢাকায় বিভাগীয় গণসমাবেশ করবেই। এতে পুলিশ বাধা দেবে, ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরাও ওইদিন মাঠে থাকবে-এমনটা ধরে নিয়েই তারা প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং সেভাবেই মাঠে থাকবে। সমাবেশস্থলে যেতে বাধা দিলে নেতাকর্মীরাও প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করবে। কিন্তু বাধার ভয়ে তারা ঘরে বসে থাকবে না। শনিবার ঢাকার বিভাগীয় গণসমাবেশে বাধা দেওয়া হলে তাৎক্ষণিকভাবে সারা দেশে বিক্ষোভ করা হবে বলেও জানান ওই নেতারা।

এদিকে পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের পর বৃহস্পতিবার সারাদিন অবরুদ্ধ ছিল নয়াপল্টন ও আশপাশের এলাকা। বন্ধ ছিল যান চলাচল। রাজধানীর ব্যস্ততম এ সড়কটি বন্ধ থাকায় আশপাশের রাস্তায় সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। সকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কার্যালয়ে যেতে চাইলে নাইটিঙ্গেল মোড়ে তাকে আটকে দেয় পুলিশ।

দলের সবশেষ অবস্থান তুলে ধরতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন মির্জা ফখরুল। সেখানে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, এজেডএম জাহিদ হোসেন, কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, জহির উদ্দিন স্বপন, জিএম সিরাজ, তাইফুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

দলের কার্যালয় পুলিশ ঘিরে রেখেছে, এ অবস্থায় কীভাবে সেখানে সমাবেশ হবে-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘১০ ডিসেম্বর আমরা সেখানে যাব। এরপর জনগণই ঠিক করবে কী হবে। অপেক্ষা করুন ঢাকায় যা হবে তা আপনারা নিজেরা স্বচক্ষে দেখবেন।’ তিনি বলেন, আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট-আমরা সমাবেশ করবই। এজন্য নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুমতি চেয়েছিলাম। এখন সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে সেটা যাতে শান্তিপূর্ণভাবে হয়। আমার অবশ্যই সমাবেশস্থলে যাব। ১০ ডিসেম্বর আমাদের বিভাগীয় সমাবেশের শেষ কর্মসূচি। এখান থেকে আমরা পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তারা যুগপৎভাবে এই আন্দোলনে থাকবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, নয়াপল্টনে পুলিশের এই জঘন্য, ন্যক্কারজনক, বর্বরোচিত হামলা সরকারের ফ্যাসিবাদী কর্তৃত্ববাদের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। এই ঘটনা প্রমাণ করে সরকার গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। তারা বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার সাংবিধানিক অধিকারও কেড়ে নিয়েছে। যা গণতন্ত্র, রাজনীতির জন্য অশনিসংকেত। এ ঘটনা গণতন্ত্রের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেওয়ার শামিল।

তিনি বলেন, আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। অফিসের কর্মচারীদেরও তারা গ্রেফতার করে। এরপর পুলিশ নিজেদের রেখে আসা বোমা উদ্ধার ও বিস্ফোরণ নামের নাটক সাজায়। শুধু পুলিশ নয়, পুলিশের সঙ্গে সোয়াত বাহিনী ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা এই সন্ত্রাসে নিয়োজিত ছিল। আর্জেন্টিনার ড্রেস পরেও গুলি করছে।

তিনি বলেন, পুলিশ বিএনপি অফিসে অযাচিতভাবে প্রবেশ করে নিচতলা থেকে ৬ তলা পর্যন্ত বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন কক্ষ তছনছ করে। এমনকি দলের চেয়ারপারসনের কক্ষ, মহাসচিবের কক্ষ, অফিস কক্ষের দরজা তারা অন্যায়ভাবে ভেঙে প্রবেশ করে এবং সব আসবাবপত্র, ফাইল, গুরুত্বপূর্ণ নথি তছনছ করে। তারা কম্পিউটার, ল্যাপটপ, হার্ডডিস্ক এমনকি দলীয় সদস্যদের প্রদেয় মাসিক চাঁদার টাকা, ব্যাংকের চেক বই, নির্বাচন কমিশন সংক্রান্তসহ সব গুরুত্বপূর্ণ নথি নিয়ে গেছে। ১৬০ বস্তা চাল উদ্ধার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা পুরোপুরি মিথ্যা। এত চাল রাখার জায়গা কোথায়। আর দুই লাখ বোতল রাখার জায়গাও সেখানে নেই।

১০ ডিসেম্বরকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের পাড়া-মহল্লায় পাহারা বসানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গণতন্ত্রের যে মূল কথা-সহনশীলতা এবং বিরোধী দলকে রাজনীতি করতে দেওয়া যেটা আমার সংবিধানসম্মত অধিকার-সেগুলোতে তারা বিশ্বাস করে না। তারা যে ভয় ও ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করে দেশ পরিচালনা করছে সেটা আরও স্পষ্ট হলো। ওবায়দুল কাদেরের (আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) কথা এবং ঢাকার ঘটনা থেকে এটা স্পষ্ট, এ হামলা একটা পরিকল্পিত প্লট, ১০ ডিসেম্বরের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ পণ্ড করতেই এটা তৈরি করা হয়েছে। যুগপৎ আন্দোলন প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা যুগপৎ আন্দোলন করব।

এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ । রিপু /প্রতিদিনের পোস্ট

Facebook Comments Box