ঢাকা , বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অস্ট্রেলিয়ার আকাশ কাঁদলেও হেসে উঠল বাংলাদেশ

প্রতিনিধির নাম
  • প্রকাশের সময় : ০৮:২৫:১৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৪ অক্টোবর ২০২২
  • / ১৬৪ বার পড়া হয়েছে

কিংসফোর্ড স্মিথ বিমানবন্দরে মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের এয়ারবাসটি ল্যান্ড করার খানিক আগেই টের পাচ্ছিলাম, নিচে আবহাওয়াটা ঠিকঠাক নেই। রোববার রাতে রানওয়ে ছোঁয়ার ঘণ্টাখানেক আগেই বারবার সিটবেল্ট বেঁধে নেওয়ার ঘোষণাটা দিচ্ছিলেন বিমান ক্রু। বিমান কিছুটা কেঁপে উঠতেই সতর্ক বার্তাটা বাড়ছিল। নির্ধারিত সময়ে রানওয়ে ছুঁতে অবশ্য তেমন বেগ পেতে হয়নি। কিন্তু বিমানবন্দর থেকে বেরোতেই দেখি গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল তীব্র শীত! সঙ্গে কনকনে বাতাস। অথচ এই সময়টাতে সিডনিতে শীত-গরমের মাঝামাঝি কিছু একটা থাকার কথা।

হোবার্টে গেল দিন বৃষ্টি না থাকলেও আকাশ কালো হয়েছিল, যেন যে কোনসময়ই কষ্টের জল নেমে আসবে স্বচ্ছ ফোঁটা হয়ে। সকালে ঘুম ভাঙতেই কথা হলো, হোবার্টে থাকা আমাদের সময়ের ক্রীড়া সম্পাদক মাইদুল বাবুর সঙ্গে। আকাশের মুখ গোমড়া শহরের দুটো ছবি পাঠিয়ে ঠিক এই কথাটাই বলছিলেন তিনি- খেলা হবেই। তবে মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন প্রচণ্ড বাতাস আর তীব্র শীতের কথা!

হোবার্টের এমন মন খারাপ করা আবহাওয়া দেখে টাইগার ভক্তদের প্রার্থনা ছিল একটাই, নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচটা অন্তত হোক। কারণ নিশ্চিত জয়ের ম্যাচ তো এটাই। অভিজ্ঞতা-শক্তি দুটোতেই যে এখানে সাকিব আল হাসানের দল ফেভারিট।

সঙ্গে আরও একটা ব্যর্থতার প্রাচীর ভাঙার পণও ছিল, আসল বিশ্বকাপে অনেক অনেক কাল না পাওয়া একটা সাফল্য ধরা দিক হাতে! সেই ২০০৭ সালে প্রথম টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে যে একটা বড় জয় এসেছে, তারপর থেকে অংশগ্রহণই অর্জন। ২০ ওভারের বিশ্বকাপে জয় সে তো টাইগারদের জন্য রূপকথার কোন এক জগত, যেখানে প্রবেশের টিকিটটাও নেই! বড় দলকে হারানোর ব্যর্থতা তো ছিলই, দ্বিতীয় রাউন্ডে যে জয়টাই ধরা দিচ্ছিল না!
যাক এবার অন্তত নেদারল্যান্ডসকে পেয়ে সেই কাজটাই করল বাংলাদেশ! বৃষ্টির চোখ রাঙানি উড়িয়ে দল তুলল ৯ রানের এক মনে রাখার মতো এক জয়।
অথচ সোমবার হোবার্টের আকাশ তারপর বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা কি ভয়টাই না পাইয়ে দিয়েছিল! ২০ ওভারে ১৪৪ রান তুলে কি আর স্বস্তিতে থাকা যায়। তার ওপর এই মাঠে আবার পরে ব্যাট করে জয়ের পাল্লাটাই ভারি। এখানে সমীকরণ মেলানোটা সহজ নয়। কিন্তু ঠিকঠাক মিলল। ব্যাট হাতে সাকিবদের দুর্বলতাটুকু নিপুণ দক্ষতায় ঢেকে দিলেন বোলাররা। আরেকটু সরাসরি বলা যায়- খেলাটা দেখালেন দুর্দান্ত ফর্মে থাকা তাসকিন আহমেদ। কন্ডিশনের সুযোগটা কী করে কাজে লাগাতে হয় সেটা বুঝিয়ে দিলেন এই স্পিডস্টার। নিলেন চার উইকেট! সঙ্গে এদিন ফিল্ডিংটাও হলো লাগসই। ব্যস, সমীকরণ না মিলে উপায় আছে?

তার আগে ব্যাট করতে নেমে ওপেনাররা ভালো একটা শুরুই এনে দেন বাংলাদেশকে। যদিও সেটি পরের ব্যাটারদের ব্যর্থতায় তেমন করে চোখে পড়ল কোথায়? ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ব্যাটিংটা অন্তত মনঃপূত হলো না। গলদটা চেনা গেছে বটে, কিন্তু সমাধানে গলদঘর্ম হয়েও যেন লাভ হচ্ছে না!

ডাচদের বিপক্ষে ব্যাট হাতে কেবল কিছু রান করেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত এবং আফিফ হোসেন। শান্ত ২৫ এবং আফিফ ৩৮। ভাবা যায় অপেক্ষাকৃত দুর্বল একটা দলের বিপক্ষেও এই হাল? সাকিব আল হাসান, লিটন দাস কিংবা ওপেনার সৌম্য সরকার কারোরই বলার মতো রান নেই। মিডল অর্ডারে দ্রুত ফিরেছেন ইয়াসির রাব্বি। এমন প্রদর্শনীতে সামনে কতোটা কী করা যাবে শঙ্কা তো থাকছেই।

নুরুল হাসান সোহান মনে হচ্ছিল কিছু একটা করবেন। রানেই তো ছিলেন সহ-অধিনায়ক। কিন্তু তিনিও ফেরেন বড় কিছু না করেই, ১৩ রানে। শেষটাতে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ১২ বল খেলে ২০ রান তুললেই কিছুটা পুঁজি পায় বাংলাদেশ। যেখানে দাঁড়িয়েই তো লেখা হলো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অনেক অনেক বছর পেরিয়ে আরেকটা জয়ের গল্প!

কিন্তু সেই গল্পের নায়ক কে হোবার্টের আকাশ নাকি তাসকিন-সেটা নিয়ে একটু চর্চা হয়েই যেতে পারে। যেখানে আবহাওয়া বিশ্লেষণে বারবারই বলা হচ্ছিল, ম্যাচটাতে হাসতে পারে বৃষ্টি, সেখানেই কি না হাসল বাংলাদেশ।

সকালে বৃষ্টির মধ্যেই একটু সময় মিলতে সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ড হয়ে গিয়েছিলাম টাউন হলের পাশে এলিজাবেথ স্ট্রিটের হাইড পার্কে। ওপাল কার্ড পাঞ্চ করে লাইট ট্রেন থেকে নামতেই চোখে স্বস্তির পরশ হয়ে ধরা দিল-সবুজের সমারোহ! এখানে এই সময়টাতে বাইরে বেরোনো সবার হাতেই থাকে একটা করে ছাতা! কখন যে আকাশ ঝেঁপে ‘ধান দেবো মেপে’র প্রতিশ্রুতি ছাড়াই বৃষ্টি নেমে আসবে কেউ জানে না! খেলা দেখতে বসে তাইতো ভাবছিলাম না জানি সেই বৃষ্টির ফোঁটার মতো বাংলাদেশের সমর্থকদের চোখে নোনা কাব্য হয়ে ঝরে পড়ে!

কষ্টের সেই বারিধারা না ঝরলেও আনন্দের কণা ঠিকই টলমল করে উঠল হোবার্টে হাজির লাল-সবুজের দর্শকদের চোখে, দেশের বাইরে এমন দৃশ্য বিরলই তো! মুখে স্লোগান-বাংলাদেশ, বাংলাদেশ… আহা কতোদিন পর! অবশেষে সুযোগ মিলল আরেকটি জয়ের গল্প বোনার।

এবারের বিশ্বকাপে তাহলে কিছু একটা হতেই চলেছে। ২৭ অক্টোবর সিডনিতে দক্ষিণ আফ্রিকা চ্যালেঞ্জ। তার আগে চনমনে হয়ে উঠল এখানকার বাঙালি পাড়া বলে খ্যাত লাকাম্বা। এদিন আর টেলিভিশনের পর্দায় নয়, সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডেই উঠবে কলরব, গর্জে উঠো বাংলাদেশ!

এই নিউজটি শেয়ার করুন

x

অস্ট্রেলিয়ার আকাশ কাঁদলেও হেসে উঠল বাংলাদেশ

প্রকাশের সময় : ০৮:২৫:১৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৪ অক্টোবর ২০২২

কিংসফোর্ড স্মিথ বিমানবন্দরে মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের এয়ারবাসটি ল্যান্ড করার খানিক আগেই টের পাচ্ছিলাম, নিচে আবহাওয়াটা ঠিকঠাক নেই। রোববার রাতে রানওয়ে ছোঁয়ার ঘণ্টাখানেক আগেই বারবার সিটবেল্ট বেঁধে নেওয়ার ঘোষণাটা দিচ্ছিলেন বিমান ক্রু। বিমান কিছুটা কেঁপে উঠতেই সতর্ক বার্তাটা বাড়ছিল। নির্ধারিত সময়ে রানওয়ে ছুঁতে অবশ্য তেমন বেগ পেতে হয়নি। কিন্তু বিমানবন্দর থেকে বেরোতেই দেখি গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল তীব্র শীত! সঙ্গে কনকনে বাতাস। অথচ এই সময়টাতে সিডনিতে শীত-গরমের মাঝামাঝি কিছু একটা থাকার কথা।

হোবার্টে গেল দিন বৃষ্টি না থাকলেও আকাশ কালো হয়েছিল, যেন যে কোনসময়ই কষ্টের জল নেমে আসবে স্বচ্ছ ফোঁটা হয়ে। সকালে ঘুম ভাঙতেই কথা হলো, হোবার্টে থাকা আমাদের সময়ের ক্রীড়া সম্পাদক মাইদুল বাবুর সঙ্গে। আকাশের মুখ গোমড়া শহরের দুটো ছবি পাঠিয়ে ঠিক এই কথাটাই বলছিলেন তিনি- খেলা হবেই। তবে মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন প্রচণ্ড বাতাস আর তীব্র শীতের কথা!

হোবার্টের এমন মন খারাপ করা আবহাওয়া দেখে টাইগার ভক্তদের প্রার্থনা ছিল একটাই, নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচটা অন্তত হোক। কারণ নিশ্চিত জয়ের ম্যাচ তো এটাই। অভিজ্ঞতা-শক্তি দুটোতেই যে এখানে সাকিব আল হাসানের দল ফেভারিট।

সঙ্গে আরও একটা ব্যর্থতার প্রাচীর ভাঙার পণও ছিল, আসল বিশ্বকাপে অনেক অনেক কাল না পাওয়া একটা সাফল্য ধরা দিক হাতে! সেই ২০০৭ সালে প্রথম টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে যে একটা বড় জয় এসেছে, তারপর থেকে অংশগ্রহণই অর্জন। ২০ ওভারের বিশ্বকাপে জয় সে তো টাইগারদের জন্য রূপকথার কোন এক জগত, যেখানে প্রবেশের টিকিটটাও নেই! বড় দলকে হারানোর ব্যর্থতা তো ছিলই, দ্বিতীয় রাউন্ডে যে জয়টাই ধরা দিচ্ছিল না!
যাক এবার অন্তত নেদারল্যান্ডসকে পেয়ে সেই কাজটাই করল বাংলাদেশ! বৃষ্টির চোখ রাঙানি উড়িয়ে দল তুলল ৯ রানের এক মনে রাখার মতো এক জয়।
অথচ সোমবার হোবার্টের আকাশ তারপর বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা কি ভয়টাই না পাইয়ে দিয়েছিল! ২০ ওভারে ১৪৪ রান তুলে কি আর স্বস্তিতে থাকা যায়। তার ওপর এই মাঠে আবার পরে ব্যাট করে জয়ের পাল্লাটাই ভারি। এখানে সমীকরণ মেলানোটা সহজ নয়। কিন্তু ঠিকঠাক মিলল। ব্যাট হাতে সাকিবদের দুর্বলতাটুকু নিপুণ দক্ষতায় ঢেকে দিলেন বোলাররা। আরেকটু সরাসরি বলা যায়- খেলাটা দেখালেন দুর্দান্ত ফর্মে থাকা তাসকিন আহমেদ। কন্ডিশনের সুযোগটা কী করে কাজে লাগাতে হয় সেটা বুঝিয়ে দিলেন এই স্পিডস্টার। নিলেন চার উইকেট! সঙ্গে এদিন ফিল্ডিংটাও হলো লাগসই। ব্যস, সমীকরণ না মিলে উপায় আছে?

তার আগে ব্যাট করতে নেমে ওপেনাররা ভালো একটা শুরুই এনে দেন বাংলাদেশকে। যদিও সেটি পরের ব্যাটারদের ব্যর্থতায় তেমন করে চোখে পড়ল কোথায়? ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ব্যাটিংটা অন্তত মনঃপূত হলো না। গলদটা চেনা গেছে বটে, কিন্তু সমাধানে গলদঘর্ম হয়েও যেন লাভ হচ্ছে না!

ডাচদের বিপক্ষে ব্যাট হাতে কেবল কিছু রান করেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত এবং আফিফ হোসেন। শান্ত ২৫ এবং আফিফ ৩৮। ভাবা যায় অপেক্ষাকৃত দুর্বল একটা দলের বিপক্ষেও এই হাল? সাকিব আল হাসান, লিটন দাস কিংবা ওপেনার সৌম্য সরকার কারোরই বলার মতো রান নেই। মিডল অর্ডারে দ্রুত ফিরেছেন ইয়াসির রাব্বি। এমন প্রদর্শনীতে সামনে কতোটা কী করা যাবে শঙ্কা তো থাকছেই।

নুরুল হাসান সোহান মনে হচ্ছিল কিছু একটা করবেন। রানেই তো ছিলেন সহ-অধিনায়ক। কিন্তু তিনিও ফেরেন বড় কিছু না করেই, ১৩ রানে। শেষটাতে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ১২ বল খেলে ২০ রান তুললেই কিছুটা পুঁজি পায় বাংলাদেশ। যেখানে দাঁড়িয়েই তো লেখা হলো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অনেক অনেক বছর পেরিয়ে আরেকটা জয়ের গল্প!

কিন্তু সেই গল্পের নায়ক কে হোবার্টের আকাশ নাকি তাসকিন-সেটা নিয়ে একটু চর্চা হয়েই যেতে পারে। যেখানে আবহাওয়া বিশ্লেষণে বারবারই বলা হচ্ছিল, ম্যাচটাতে হাসতে পারে বৃষ্টি, সেখানেই কি না হাসল বাংলাদেশ।

সকালে বৃষ্টির মধ্যেই একটু সময় মিলতে সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ড হয়ে গিয়েছিলাম টাউন হলের পাশে এলিজাবেথ স্ট্রিটের হাইড পার্কে। ওপাল কার্ড পাঞ্চ করে লাইট ট্রেন থেকে নামতেই চোখে স্বস্তির পরশ হয়ে ধরা দিল-সবুজের সমারোহ! এখানে এই সময়টাতে বাইরে বেরোনো সবার হাতেই থাকে একটা করে ছাতা! কখন যে আকাশ ঝেঁপে ‘ধান দেবো মেপে’র প্রতিশ্রুতি ছাড়াই বৃষ্টি নেমে আসবে কেউ জানে না! খেলা দেখতে বসে তাইতো ভাবছিলাম না জানি সেই বৃষ্টির ফোঁটার মতো বাংলাদেশের সমর্থকদের চোখে নোনা কাব্য হয়ে ঝরে পড়ে!

কষ্টের সেই বারিধারা না ঝরলেও আনন্দের কণা ঠিকই টলমল করে উঠল হোবার্টে হাজির লাল-সবুজের দর্শকদের চোখে, দেশের বাইরে এমন দৃশ্য বিরলই তো! মুখে স্লোগান-বাংলাদেশ, বাংলাদেশ… আহা কতোদিন পর! অবশেষে সুযোগ মিলল আরেকটি জয়ের গল্প বোনার।

এবারের বিশ্বকাপে তাহলে কিছু একটা হতেই চলেছে। ২৭ অক্টোবর সিডনিতে দক্ষিণ আফ্রিকা চ্যালেঞ্জ। তার আগে চনমনে হয়ে উঠল এখানকার বাঙালি পাড়া বলে খ্যাত লাকাম্বা। এদিন আর টেলিভিশনের পর্দায় নয়, সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডেই উঠবে কলরব, গর্জে উঠো বাংলাদেশ!