ঢাকা , শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

“ঈদগাহ মাঠে বিএনপির ১০ হাজার নেতাকর্মীর রান্না খাওয়া ঘুম”

  • রিপু
  • প্রকাশের সময় : ০৪:৫২:১৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ ডিসেম্বর ২০২২
  • ৯৮ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিদিনের পোস্ট || ঈদগাহ মাঠে বিএনপির ১০ হাজার নেতাকর্মীর রান্না খাওয়া ঘুম|

রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ শনিবার (৩ ডিসেম্বর)। রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দানে অনুষ্ঠিত হবে। এ সমাবেশকে ঘিরে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম উৎসাহ আর উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে।

পরিবহণ ধর্মঘটের কারণে দুই দিন আগে বুধবার রাত থেকেই রাজশাহী বিভাগের আট জেলার বিএনপি নেতাকর্মীরা মাদ্রাসা ময়দানে আসতে শুরু করেছেন। বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত ঈদগাহ মাঠে অন্তত ১০ হাজার বিএনপি নেতাকর্মীর সমাগম ঘটেছে।

মাদ্রাসা মাঠ সংলগ্ন শাহ মখদুম ঈদগাহ মাঠে খোলা আকাশের নিচে নিয়েছেন অবস্থান। সেখানেই রাতে ঘুমাচ্ছেন। করেছেন সেখানেই রান্না এবং খাবার ব্যবস্থা।

বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিযোগ, রাজশাহীর গণসমাবেশে তাদের পথে পথে পুলিশের বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। সমাবেশস্থলে পৌঁছার আগেই রাজশাহী মহানগরীর প্রবেশদ্বারগুলোতে তাদের আটকে দিচ্ছে পুলিশ। এরপর তাদের হেঁটে সমাবেশস্থলে আসতে হচ্ছে। অনেক স্থানে নেতাকর্মীদের মারধর করা হচ্ছে। বাসের চালকদের কাছ থেকে চাবি কেড়ে নেওয়া হয়েছে। খাদ্যদ্রব্য রাস্তায় ফেলে দেওয়া হয়েছে। মহাসড়ক দিয়ে একসঙ্গে পুলিশ আসতে দিচ্ছে না। বাধ্য হয়ে মহাসড়ক এড়িয়ে পাড়া-মহল্লার গলির রাস্তা দিয়ে অনেক প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে নেতাকর্মীরা মাইলের পর মাইল হেঁটে সমাবেশ স্থলে আসছেন। অনেকে ভ্যানে করে আসছেন। অনেকের আবার রিকশায়। এছাড়া অনেকে সিএনজিতে আসছেন। বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে সরেজমিন এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

তবে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, রাজশাহীতে বিএনপি বড় ধরনের সমাবেশের প্রস্তুতি নিয়েছে। এ সমাবেশকে ঘিরে কেউ যেন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা হচ্ছে। রাজশাহী বিভাগের সব জেলা এবং উপজেলায় বিএনপি নেতাকর্মীদের কর্মকাণ্ড লক্ষ্য করা হচ্ছে। সবার নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই পুলিশ তৎপর রয়েছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে মাদ্রাসা মাঠসংলগ্ন ঈদগাহ মাঠে নেতাকর্মীদের নিয়ে অবস্থান করছিলেন আহমদ শরিফ। তিনি পাবনার ভাঙ্গুরা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। বুধবার রাতে তিনি তিনশজন নেতাকর্মী নিয়ে ট্রেনে করে রাজশাহীতে এসেছেন।

পাশেই ছিলেন ঢাকার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শেষবর্ষের শিক্ষার্থী মাসুম রেজা। তিনি নাটোরের বড়াইগ্রাম পৌরসভা ছাত্রদলের আহবায়ক। তিনি বলেন, আমরা বাসে করে বুধবার রাতে বড়াইগ্রাম থেকে রওনা দিয়েছি। কিন্তু পুলিশ আমাদের বাস তিনটি স্থানে আটকে দিয়েছে। অবশেষে আমরা পুঠিয়ার বানেশ্বর থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে সমাবেশস্থলে এসেছি।

ঈদগাহ ময়দানে ছিলেন আব্দুল জলিল শেখ নামের একজন ৮২ বছর বয়সী বৃদ্ধ। তিনি বিএনপির সমর্থক। বাড়ি পাবনার সুজানগর। তিনি বিএনপির ১৫-১৬ জন নেতাকর্মীর সঙ্গে বুধবার রাতে বাসে করে রাজশাহীতে এসেছেন। তিনি বলেন, বৃদ্ধ বয়সে বিএনপি নেতাদের একনজর দেখার ইচ্ছা থেকেই আমি রাজশাহী এসেছি। কিন্তু পথে পথে যে কষ্ট পেয়েছি, সেটি অবর্ণনীয়। পুলিশের এ ধরনের আচরণের আমি প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

একই এলাকা সুজানগর পৌর বিএনপির নেতা হামিদুল হক বলেন, আমরা ছয়শ নেতাকর্মী বাসে এসেছি। নাটোরে আমাদের বাস আটকিয়ে দেওয়া হয়েছে। সবশেষ রাজশাহীর বানেশ্বরে বাস থেকে আমাদের নামিয়ে দিয়েছে পুলিশ। গভীর রাতে বাস থেকে নামিয়ে দেওয়ার কারণে আমরা সারারাত হেঁটে সকালে সমাবেশস্থলে এসে পৌঁছেছি।

পাবনার ঈশ্বরদী থেকে এসেছেন সিরাজুল ইসলাম সরদার। তিনি পাবনা-৪ আসনের সাবেক এমপি এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য। তিনি বলেন, বুধবার রাতে আমরা ট্রেনে ও বাসে করে প্রায় এক হাজার দুইশ নেতাকর্মী এসেছি। কিন্তু সমাবেশ স্থলে আসার আগেই রাজশাহী মহানগরীর প্রবেশদ্বার তালাইমারিতে আমাদের বাস ও ট্রাক থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিশের এ ধরনের আচরণের আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

নওগাঁর পত্নীতলা থেকে এসেছেন ইমামুল মুক্তাকিন। তিনি পত্নীতলা উপজেলার ঘোষনগর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, আমরা বাসে করে তিনশ নেতাকর্মী এসেছি। কিন্তু আমাদের সমাবেশস্থল পর্যন্ত বাসে আসতে দেওয়া হয়নি। পুলিশ রাজশাহী মহানগরীর উপকণ্ঠ নওহাটায় নামিয়ে দিয়েছে। প্রায় ১২ কিলোমিটার রাস্তা পায়ে হেঁটে আমরা সমাবেশ স্থলে এসে পৌঁছেছি।

নাটোরের নলডাঙ্গা থেকে এসেছেন মহুয়া পারভীন লিপি। তিনি নলডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, নলডাঙ্গা থেকে আসতে আমরা পথে পথে বাধার সম্মুখীন হয়েছি। পুলিশ কয়েকবার আমাদের বাস আটকে দিয়েছে।

বগুড়া সদর থেকে এসেছেন গুলজার প্রামাণিক। তিনি বিএনপির সমর্থক। গুলজার বলেন, আমাদের বগুড়া থেকে সরাসরি বাসে করে রাজশাহীতে আসতে বাধা দিয়েছে পুলিশ। নওগাঁর শান্তাহারে গাড়ি আটকে দিয়েছে। এরপর প্রায় ৮০ কিলোমিটার পথ ঘুরে নওগাঁর সাপাহার দিয়ে রাজশাহী মহানগরীর আমচত্বরে এসেছি।

এদিকে বুধবার দেখা গেছে ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দানে মঞ্চ নির্মাণের কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। মঞ্চ পরিদর্শন করেছেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, বিএনপির রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু বক্কর সিদ্দীকী, রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন, জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সাঈদ চাঁদ, মহানগর বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ঈশাসহ নেতারা।

এ সময় বিএনপি নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, বিএনপির গণসমাবেশ নসাৎ করার জন্য সরকারের ইঙ্গিতে পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। বুধবার সকাল থেকে বিএনপি নেতাকর্মীরা রাজশাহী আসতে শুরু করেছেন। কিন্তু পুলিশ গণসমাবেশে আগত বিএনপি নেতাকর্মীদের বাস ও ট্রাক রাজশাহীতে ঢুকতে দেয়নি। তারপরও বিএনপি নেতাকর্মীদের আটকে রাখতে পারেনি। হেঁটে, রিকশায় চড়ে, ভ্যানে করে, সাইকেল চালিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা সমাবেশ স্থলে আসছেন।

তিনি বলেন, সমাবেশস্থলের পাশে ঈদগাহ মাঠে কয়েক হাজার নেতাকর্মী অবস্থান নিয়েছেন। তাদের খাদ্যদ্রব্য কেড়ে নেওয়া হয়েছে। চুলায় পানি দেওয়া হয়েছে। পুলিশের এ ধরনের আচরণ অত্যন্ত অমানবিক। মনে হচ্ছে পুলিশই যেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দায়িত্ব পালন করছে। জনসভা যেন সফল না হয়, সেজন্য পুলিশ সব ধরনের চেষ্টা করছে। হাতেগোনা কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা এমনটি করছেন। পুলিশের আচরণ গণবিরোধী। এর ফলে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। তবে বাধা দিয়ে লাভ হবে না। সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে রাজশাহীর গণসমাবেশ সফল করা হবে।

সার্বিক বিষয়ে রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) মুখপাত্র অতিরিক্ত উপকমিশনার রফিকুল আলম বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের কোনো ধরনের হয়রানি করা হচ্ছে না। ৩ ডিসেম্বর বিএনপির গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে আমরা জননিরাপত্তার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। কেউ যেন সহিংসতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

তিনি বলেন, পুলিশের বিরুদ্ধে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। যারা গুজব ছড়াচ্ছেন, তাদের আমরা শনাক্ত করার চেষ্টা করছি। মহানগরীর প্রবেশদ্বারগুলোতে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। জনগণের নিরাপত্তার বিষয়টি আমরা নিশ্চিত করতে চাইছি।

এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ । রিপু /প্রতিদিনের পোস্ট

Facebook Comments Box
জনপ্রিয়

“ঈদগাহ মাঠে বিএনপির ১০ হাজার নেতাকর্মীর রান্না খাওয়া ঘুম”

প্রকাশের সময় : ০৪:৫২:১৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ ডিসেম্বর ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিদিনের পোস্ট || ঈদগাহ মাঠে বিএনপির ১০ হাজার নেতাকর্মীর রান্না খাওয়া ঘুম|

রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ শনিবার (৩ ডিসেম্বর)। রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দানে অনুষ্ঠিত হবে। এ সমাবেশকে ঘিরে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম উৎসাহ আর উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে।

পরিবহণ ধর্মঘটের কারণে দুই দিন আগে বুধবার রাত থেকেই রাজশাহী বিভাগের আট জেলার বিএনপি নেতাকর্মীরা মাদ্রাসা ময়দানে আসতে শুরু করেছেন। বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত ঈদগাহ মাঠে অন্তত ১০ হাজার বিএনপি নেতাকর্মীর সমাগম ঘটেছে।

মাদ্রাসা মাঠ সংলগ্ন শাহ মখদুম ঈদগাহ মাঠে খোলা আকাশের নিচে নিয়েছেন অবস্থান। সেখানেই রাতে ঘুমাচ্ছেন। করেছেন সেখানেই রান্না এবং খাবার ব্যবস্থা।

বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিযোগ, রাজশাহীর গণসমাবেশে তাদের পথে পথে পুলিশের বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। সমাবেশস্থলে পৌঁছার আগেই রাজশাহী মহানগরীর প্রবেশদ্বারগুলোতে তাদের আটকে দিচ্ছে পুলিশ। এরপর তাদের হেঁটে সমাবেশস্থলে আসতে হচ্ছে। অনেক স্থানে নেতাকর্মীদের মারধর করা হচ্ছে। বাসের চালকদের কাছ থেকে চাবি কেড়ে নেওয়া হয়েছে। খাদ্যদ্রব্য রাস্তায় ফেলে দেওয়া হয়েছে। মহাসড়ক দিয়ে একসঙ্গে পুলিশ আসতে দিচ্ছে না। বাধ্য হয়ে মহাসড়ক এড়িয়ে পাড়া-মহল্লার গলির রাস্তা দিয়ে অনেক প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে নেতাকর্মীরা মাইলের পর মাইল হেঁটে সমাবেশ স্থলে আসছেন। অনেকে ভ্যানে করে আসছেন। অনেকের আবার রিকশায়। এছাড়া অনেকে সিএনজিতে আসছেন। বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে সরেজমিন এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

তবে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, রাজশাহীতে বিএনপি বড় ধরনের সমাবেশের প্রস্তুতি নিয়েছে। এ সমাবেশকে ঘিরে কেউ যেন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা হচ্ছে। রাজশাহী বিভাগের সব জেলা এবং উপজেলায় বিএনপি নেতাকর্মীদের কর্মকাণ্ড লক্ষ্য করা হচ্ছে। সবার নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই পুলিশ তৎপর রয়েছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে মাদ্রাসা মাঠসংলগ্ন ঈদগাহ মাঠে নেতাকর্মীদের নিয়ে অবস্থান করছিলেন আহমদ শরিফ। তিনি পাবনার ভাঙ্গুরা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। বুধবার রাতে তিনি তিনশজন নেতাকর্মী নিয়ে ট্রেনে করে রাজশাহীতে এসেছেন।

পাশেই ছিলেন ঢাকার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শেষবর্ষের শিক্ষার্থী মাসুম রেজা। তিনি নাটোরের বড়াইগ্রাম পৌরসভা ছাত্রদলের আহবায়ক। তিনি বলেন, আমরা বাসে করে বুধবার রাতে বড়াইগ্রাম থেকে রওনা দিয়েছি। কিন্তু পুলিশ আমাদের বাস তিনটি স্থানে আটকে দিয়েছে। অবশেষে আমরা পুঠিয়ার বানেশ্বর থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে সমাবেশস্থলে এসেছি।

ঈদগাহ ময়দানে ছিলেন আব্দুল জলিল শেখ নামের একজন ৮২ বছর বয়সী বৃদ্ধ। তিনি বিএনপির সমর্থক। বাড়ি পাবনার সুজানগর। তিনি বিএনপির ১৫-১৬ জন নেতাকর্মীর সঙ্গে বুধবার রাতে বাসে করে রাজশাহীতে এসেছেন। তিনি বলেন, বৃদ্ধ বয়সে বিএনপি নেতাদের একনজর দেখার ইচ্ছা থেকেই আমি রাজশাহী এসেছি। কিন্তু পথে পথে যে কষ্ট পেয়েছি, সেটি অবর্ণনীয়। পুলিশের এ ধরনের আচরণের আমি প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

একই এলাকা সুজানগর পৌর বিএনপির নেতা হামিদুল হক বলেন, আমরা ছয়শ নেতাকর্মী বাসে এসেছি। নাটোরে আমাদের বাস আটকিয়ে দেওয়া হয়েছে। সবশেষ রাজশাহীর বানেশ্বরে বাস থেকে আমাদের নামিয়ে দিয়েছে পুলিশ। গভীর রাতে বাস থেকে নামিয়ে দেওয়ার কারণে আমরা সারারাত হেঁটে সকালে সমাবেশস্থলে এসে পৌঁছেছি।

পাবনার ঈশ্বরদী থেকে এসেছেন সিরাজুল ইসলাম সরদার। তিনি পাবনা-৪ আসনের সাবেক এমপি এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য। তিনি বলেন, বুধবার রাতে আমরা ট্রেনে ও বাসে করে প্রায় এক হাজার দুইশ নেতাকর্মী এসেছি। কিন্তু সমাবেশ স্থলে আসার আগেই রাজশাহী মহানগরীর প্রবেশদ্বার তালাইমারিতে আমাদের বাস ও ট্রাক থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিশের এ ধরনের আচরণের আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

নওগাঁর পত্নীতলা থেকে এসেছেন ইমামুল মুক্তাকিন। তিনি পত্নীতলা উপজেলার ঘোষনগর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, আমরা বাসে করে তিনশ নেতাকর্মী এসেছি। কিন্তু আমাদের সমাবেশস্থল পর্যন্ত বাসে আসতে দেওয়া হয়নি। পুলিশ রাজশাহী মহানগরীর উপকণ্ঠ নওহাটায় নামিয়ে দিয়েছে। প্রায় ১২ কিলোমিটার রাস্তা পায়ে হেঁটে আমরা সমাবেশ স্থলে এসে পৌঁছেছি।

নাটোরের নলডাঙ্গা থেকে এসেছেন মহুয়া পারভীন লিপি। তিনি নলডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, নলডাঙ্গা থেকে আসতে আমরা পথে পথে বাধার সম্মুখীন হয়েছি। পুলিশ কয়েকবার আমাদের বাস আটকে দিয়েছে।

বগুড়া সদর থেকে এসেছেন গুলজার প্রামাণিক। তিনি বিএনপির সমর্থক। গুলজার বলেন, আমাদের বগুড়া থেকে সরাসরি বাসে করে রাজশাহীতে আসতে বাধা দিয়েছে পুলিশ। নওগাঁর শান্তাহারে গাড়ি আটকে দিয়েছে। এরপর প্রায় ৮০ কিলোমিটার পথ ঘুরে নওগাঁর সাপাহার দিয়ে রাজশাহী মহানগরীর আমচত্বরে এসেছি।

এদিকে বুধবার দেখা গেছে ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দানে মঞ্চ নির্মাণের কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। মঞ্চ পরিদর্শন করেছেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, বিএনপির রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু বক্কর সিদ্দীকী, রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন, জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সাঈদ চাঁদ, মহানগর বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ঈশাসহ নেতারা।

এ সময় বিএনপি নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, বিএনপির গণসমাবেশ নসাৎ করার জন্য সরকারের ইঙ্গিতে পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। বুধবার সকাল থেকে বিএনপি নেতাকর্মীরা রাজশাহী আসতে শুরু করেছেন। কিন্তু পুলিশ গণসমাবেশে আগত বিএনপি নেতাকর্মীদের বাস ও ট্রাক রাজশাহীতে ঢুকতে দেয়নি। তারপরও বিএনপি নেতাকর্মীদের আটকে রাখতে পারেনি। হেঁটে, রিকশায় চড়ে, ভ্যানে করে, সাইকেল চালিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা সমাবেশ স্থলে আসছেন।

তিনি বলেন, সমাবেশস্থলের পাশে ঈদগাহ মাঠে কয়েক হাজার নেতাকর্মী অবস্থান নিয়েছেন। তাদের খাদ্যদ্রব্য কেড়ে নেওয়া হয়েছে। চুলায় পানি দেওয়া হয়েছে। পুলিশের এ ধরনের আচরণ অত্যন্ত অমানবিক। মনে হচ্ছে পুলিশই যেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দায়িত্ব পালন করছে। জনসভা যেন সফল না হয়, সেজন্য পুলিশ সব ধরনের চেষ্টা করছে। হাতেগোনা কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা এমনটি করছেন। পুলিশের আচরণ গণবিরোধী। এর ফলে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। তবে বাধা দিয়ে লাভ হবে না। সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে রাজশাহীর গণসমাবেশ সফল করা হবে।

সার্বিক বিষয়ে রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) মুখপাত্র অতিরিক্ত উপকমিশনার রফিকুল আলম বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের কোনো ধরনের হয়রানি করা হচ্ছে না। ৩ ডিসেম্বর বিএনপির গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে আমরা জননিরাপত্তার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। কেউ যেন সহিংসতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

তিনি বলেন, পুলিশের বিরুদ্ধে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। যারা গুজব ছড়াচ্ছেন, তাদের আমরা শনাক্ত করার চেষ্টা করছি। মহানগরীর প্রবেশদ্বারগুলোতে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। জনগণের নিরাপত্তার বিষয়টি আমরা নিশ্চিত করতে চাইছি।

এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ । রিপু /প্রতিদিনের পোস্ট

Facebook Comments Box