ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এক কুমড়ার ওজন ১১৫৮ কেজি!

প্রতিনিধির নাম
  • প্রকাশের সময় : ০১:১২:৫৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • / ৩৪৩ বার পড়া হয়েছে

জেনে অবাক হবেন এক হাজার ১৫৮ কেজি একটি কুমড়ার ওজন। অবাক করার মতো হলেও বিষয়টি সত্য। দৈত্যাকার এই কুমড়া নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এক কৃষক তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। গড়েছেন রেকর্ডও।

নিউ ইয়র্কের কৃষক স্কট অ্যান্ড্রেস। তার ক্ষেতেই এ বিশাল কুমড়া ফলেছে। যা দিয়ে তিনি নিউ ইয়র্কে ‘দ্য গ্রেট পামকিন ফার্ম’ নামে প্রতিযোগিতায় সেরার পুরস্কার পেয়েছেন।

স্কট অ্যান্ড্রেস অল্পের জন্য গড়তে পারেননি বিশ্ব রেকর্ড। এক হাজার ১৫৮ কেজি তার এই কুমড়ার ওজন। সেখানে ইটালির এক কৃষক এক হাজার ২২৫ কেজি ওজনের কুমড়া ফলিয়ে করেছেন বিশ্ব রেকর্ড।

স্কট জানিয়েছেন, বিশ্ব রেকর্ডের লক্ষ্য ছিল তার। যার কারণে তিনি দিন-রাত এক করে দেখাশোনা করে গেছেন কুমড়ার। এদিকে, বিশ্ব রেকর্ড না করতে পারলেও উত্তর আমেরিকায় সবচেয়ে বেশি ওজনের কুমড়ার রেকর্ড তারই দখলে। আর তিনি তাতেই সন্তুষ্ট।

আরও পড়ুন: একটি কুমড়ার ওজন ৩১ মণ


একটি_কুমড়ার_ওজন_৩১_মণ

স্বাদে সেরা আর আকৃতিতে বিশাল, যে কারণে মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরের আড়িয়ল বিলের মিষ্টি কুমড়ার খ্যাতি রয়েছে দেশ ও বিদেশজুড়ে। দেশের জাতীয় কৃষি মেলা তথা আন্তর্জাতিক মেলা প্রদর্শনী ও বিক্রির তালিকায় রয়েছে এ কুমড়া।

গত বছর আড়িয়ল বিলে উৎপাদন হয়েছে ১১ হাজার ২৪০ মেট্রিক টন মিষ্টি কুমড়া। এ বছরও বিলের গাদিঘাট, শ্রীধরপুর, আলমপুর, বাড়ৈখালীসহ ১৯০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে স্থানীয় জাতের মিষ্টি কুমড়ার।

এর মধ্যেই কৃষকরা জমি থেকে কুমড়া উত্তোলন করে বাজারজাত করছেন। এ বছর ফলনও ভালো হয়েছে, বিক্রিতেও রয়েছে চাহিদা। ফলন ও জমি থেকে বিলম্বে উত্তোলন হওয়ায় আশানুরূপ দাম পাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিলের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ হয়েছে। একেকটি ৩০ থেকে ৭০ কেজি ওজনের কুমড়া দেখতে যেমন সুন্দর আকৃতিতেও বিশাল। ফসল উত্তোলনে জমিতে কৃষকরা সকাল থেকে কাজ শুরু করেন।

জমির আকৃতি ও ফসলের পরিমাণ অনুযায়ী কমবেশি শ্রমিক কুমড়া উত্তোলনে কাজ করেন। শ্রমিকদের দিনপ্রতি পারিশ্রমিক ৫০০ টাকা। শ্রমিকরা জমি থেকে মাথায় ও নৌকায় করে গাদিঘাটসহ বিলের বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার পাশে কুমড়া মজুত করেন। সেখান থেকে পাইকাররা গাড়িতে ঢাকায় নিয়ে যান প্রতিদিন সন্ধ্যায়।

গাদিঘাট এলাকায় দেখা যায়, পাইকারদের অপেক্ষায় কুমড়া ট্রলারে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। কোনোটি গোলাকার আবার কোনোটি কিছুটা লম্বা আকৃতির।

কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, একগন্ডা (১৪ শতাংশ) জমিতে ১০-১২টি চারা রোপণ করা হয়। প্রতিটি চারায় কুমড়া হয় ২০ থেকে ৬০টি। ফসল তোলা যায় রোপণের তিন মাস পরই। শীতের শেষ দিকে ফসল প্রস্তুত হয় বাজারে বিক্রির জন্য। এ বছরও ভালো ফলন হয়েছে।

কেজিপ্রতি ৫ থেকে বাজার ভালো হলে ৩০ টাকায় পাইকারদের কাছে বিক্রি করা হলেও বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৬ টাকা কেজি দরে। একগন্ডা জমিতে কুমড়া চাষে খরচ হয় ৭-৮ হাজার টাকা। ঢাকার কারওয়ান বাজার, মিরপুরসহ বিভিন্ন বাজারে এসব কুমড়া পাইকাররা বিক্রি করেন। এছাড়া জেলার ছয়টি উপজেলা ও আশপাশের জেলায়ও এসব কুমড়া বিক্রি হয়।

শ্রীধরপুর এলাকার চাষি বার্শেদ আলী বলেন, ‘৩৫ বছর ধরে বিলে চাষ করি কুমড়া। কেজি অনুযায়ী ২০০ থেকে ৫ হাজার টাকাও বিক্রি হয়। খেতে খুব স্বাদ তাই মানুষ নিতে আহে বিভিন্ন জায়গা থেকে। আইলে কি ওইবো। এখনতো দাম পাইতাছি না। একপাখি (৩৫ শতাংশ) জমিতে কুমড়া চাষে খরচ হয় ১৫ হাজার টাকা। বর্তমানে বিক্রি কইরা ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা উঠবো। এই কয় টাকায় তিন মাস খাটনিতে কি লাভ থাকে।’

গাদিরঘাট এলাকার অপর কৃষক মো. জনি বলেন, ‘এ বছর ১৫ থেকে ২০ দিন দেরিতে উঠেছে ফসল। বাজারে বিক্রি হইতাছে। তবে একবারে দাম কম। বাজার অনুযায়ী আমরা দাম পাই। এখন পাইকারদের কাছে কেজিপ্রতি ৬ টাকায় বিক্রি করতে হয়।

আরেক কৃষক মনির হোসেন বলেন, ফসলের ফলন হয়েছে অনেক ভালো। ৮জন শ্রমিক লাগে জমির ২০ হাজার টাকার কুমড়া তুলতে। ৪ হাজার টাকা খরচ হয়। আমাদের ভালো লাভ হতো যদি পাইকারদের কাছে কেজিতে ১০ থেকে ১২ টাকা বিক্রি করতে পারতাম।

এ ব্যাপারে পাইকার লিটন শেখ বলেন, ৬টাকায় কুমড়া কিনে নিয়ে ঢাকার বাজারে ১২টাকায় বিক্রি করছি। এক গাড়ি কুমড়া নিতে গাড়ি ভাড়া দিতে হয় ৭হাজার টাকা। ২শর মত কুমড়া নিতে পারি ৪ টনে গাড়িতে।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শান্তনা রাণী জানান, এ বছর প্রায় ১৯০হেক্টর জমিতে কুমড়া আবাদ হয়েছে। প্রতিবছর জানুয়ারি মাসের শেষ ও ফেব্রুয়ারির শুরুতেই কুমড়া উত্তোলন শেষ হলেও এ বছর এখনো কুমড়া উত্তোলন শেষ হয়নি। উত্তোলন বিলম্ব হওয়ায় বাজারে কিছুটা কম দাম পেয়ে থাকতে পারে।

বিশাল আকৃতির কুমড়া ফলনের রহস্য:
কৃষি অফিসের সূত্রে মতে, প্রতিবছর বর্ষার পর বিলের জমিতে কুমড়রা আবাদ হয়। চারা রোপণের ৩ মাসেই ফসল উৎপাদনে সময় লাগে মাস। বিলের কুমড়ার জাত একবারেই স্থানীয় স্বতন্ত্র। অন্য কোনো জমিতে এলাকার কুমড়ার বীজ রোপণ করলেও এমন স্বাদ ও বিশাল আকৃতির হয় না।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শান্তনা রাণী বলেন, বিশেষ ভৌগলিক কারণে এ বিলের কুমড়ার আকৃতি এতো বিশাল হয়ে থাকে। আমি অন্য কোন জেলায় এতবড় কুমড়া দেখিনি। মূলত বর্ষা মৌসুমে দীঘদিন বিলের জমি পানিতে নিমজ্জিত থাকে। এসময় পানিতে জলীয় উদ্ভিদ জন্ম নেয়। পানি নেমে গেলে এসব উদ্ভিদ বিলের মাটিতে পঁচে প্রাকৃতিক সার হিসাবে কাজ করে। যা মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। এতে ফসল ভালো ফলন হয়।

৩মণ ওজনের কুমড়া!
এদিকে এ বছর বিলে সবচেয়ে বিশাল আকৃতির ১২১ কেজি (৩মণ ১ কেজি) ওজনের কুমড়া উত্তোলন করা হয়ছে গাদিঘাট এলাকার গনি শেখের জমি থেকে। কুমড়াটি গাদিঘাট এলাকায় জমি থেকে উত্তোলন করা হয়। উত্তোলনের দিনই কুমড়াটি বিলে ঘুরতে আসা এক ব্যক্তির কাছে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছে সে। গনি মিয়ার ভাগিনা কৃষক বাবু জানান, এইবার দেখা বিলের সবচেয়ে বড় আকৃতির কুমড়া এটি। জমি থেকে ৪জন মিলে বস্তায় ভরে বাসে জুলিয়ে কুমড়াটি বাজারে নিয়ে আসতে হয়েছে। তিনি আরো বলেন, তবে এর আগেও এর থেকে বড় কুমড়া দেখেছি। ৪ থেকে ৫বছর আগে একবার ৪ মণ ওজনের কুমড়া বাজারে তোলা হয়েছিলো।

বেড়েছে হাইব্রিড জাতের কুমড়া আবাদ:
এদিকে আড়িয়ল বিলে স্থানীয় জাতের পাশাপাশি ক্রমাগত বেড়েই চলছে হাইব্রিড কুমড়া চাষ। তবে সেসব কুমড়া স্বাদ ভালো হলেও আকৃতিতে অনেকটাই ছোট। ২থেকে ৭কেজি হয়ে থাকে হাইব্রিড জাতের কুমড়া।

হাইব্রিড কুমড়া চাষি শ্রীধরপুর এলাকার খন্দকার আবুল বারী জানান, দেশি কুমড়ার আকৃতি বড় হলেও একটি জমি থেকে এক মৌসুমে ২দফার বেশি উত্তোলন করা যায় না কিন্তু হাইব্রিড তিনবারও করা যায়। বাজারে চাহিদা আছে তাই এই কুমড়া রোপণ করি। একেকটি কুমড়া ৫০-১০০টাকায় বিক্রি হয়। লাভ ভালো হওয়ায় অনেক চাষিই হাইব্রিড চাষ করছে।

আরেক চাষি ইসমাইল মিয়া বলেন, দেশি কুমড়াই সব সময় রোপণ করি , তবে কয়েক বছর যাবত দেশির পাশাপাশি হাইব্রিডও চাষ শুরু করেছি।

এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ন বেআইনী এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সারা/প্রতিদিনের পোস্ট

এই নিউজটি শেয়ার করুন

x

এক কুমড়ার ওজন ১১৫৮ কেজি!

প্রকাশের সময় : ০১:১২:৫৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

জেনে অবাক হবেন এক হাজার ১৫৮ কেজি একটি কুমড়ার ওজন। অবাক করার মতো হলেও বিষয়টি সত্য। দৈত্যাকার এই কুমড়া নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এক কৃষক তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। গড়েছেন রেকর্ডও।

নিউ ইয়র্কের কৃষক স্কট অ্যান্ড্রেস। তার ক্ষেতেই এ বিশাল কুমড়া ফলেছে। যা দিয়ে তিনি নিউ ইয়র্কে ‘দ্য গ্রেট পামকিন ফার্ম’ নামে প্রতিযোগিতায় সেরার পুরস্কার পেয়েছেন।

স্কট অ্যান্ড্রেস অল্পের জন্য গড়তে পারেননি বিশ্ব রেকর্ড। এক হাজার ১৫৮ কেজি তার এই কুমড়ার ওজন। সেখানে ইটালির এক কৃষক এক হাজার ২২৫ কেজি ওজনের কুমড়া ফলিয়ে করেছেন বিশ্ব রেকর্ড।

স্কট জানিয়েছেন, বিশ্ব রেকর্ডের লক্ষ্য ছিল তার। যার কারণে তিনি দিন-রাত এক করে দেখাশোনা করে গেছেন কুমড়ার। এদিকে, বিশ্ব রেকর্ড না করতে পারলেও উত্তর আমেরিকায় সবচেয়ে বেশি ওজনের কুমড়ার রেকর্ড তারই দখলে। আর তিনি তাতেই সন্তুষ্ট।

আরও পড়ুন: একটি কুমড়ার ওজন ৩১ মণ


একটি_কুমড়ার_ওজন_৩১_মণ

স্বাদে সেরা আর আকৃতিতে বিশাল, যে কারণে মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরের আড়িয়ল বিলের মিষ্টি কুমড়ার খ্যাতি রয়েছে দেশ ও বিদেশজুড়ে। দেশের জাতীয় কৃষি মেলা তথা আন্তর্জাতিক মেলা প্রদর্শনী ও বিক্রির তালিকায় রয়েছে এ কুমড়া।

গত বছর আড়িয়ল বিলে উৎপাদন হয়েছে ১১ হাজার ২৪০ মেট্রিক টন মিষ্টি কুমড়া। এ বছরও বিলের গাদিঘাট, শ্রীধরপুর, আলমপুর, বাড়ৈখালীসহ ১৯০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে স্থানীয় জাতের মিষ্টি কুমড়ার।

এর মধ্যেই কৃষকরা জমি থেকে কুমড়া উত্তোলন করে বাজারজাত করছেন। এ বছর ফলনও ভালো হয়েছে, বিক্রিতেও রয়েছে চাহিদা। ফলন ও জমি থেকে বিলম্বে উত্তোলন হওয়ায় আশানুরূপ দাম পাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিলের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ হয়েছে। একেকটি ৩০ থেকে ৭০ কেজি ওজনের কুমড়া দেখতে যেমন সুন্দর আকৃতিতেও বিশাল। ফসল উত্তোলনে জমিতে কৃষকরা সকাল থেকে কাজ শুরু করেন।

জমির আকৃতি ও ফসলের পরিমাণ অনুযায়ী কমবেশি শ্রমিক কুমড়া উত্তোলনে কাজ করেন। শ্রমিকদের দিনপ্রতি পারিশ্রমিক ৫০০ টাকা। শ্রমিকরা জমি থেকে মাথায় ও নৌকায় করে গাদিঘাটসহ বিলের বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার পাশে কুমড়া মজুত করেন। সেখান থেকে পাইকাররা গাড়িতে ঢাকায় নিয়ে যান প্রতিদিন সন্ধ্যায়।

গাদিঘাট এলাকায় দেখা যায়, পাইকারদের অপেক্ষায় কুমড়া ট্রলারে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। কোনোটি গোলাকার আবার কোনোটি কিছুটা লম্বা আকৃতির।

কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, একগন্ডা (১৪ শতাংশ) জমিতে ১০-১২টি চারা রোপণ করা হয়। প্রতিটি চারায় কুমড়া হয় ২০ থেকে ৬০টি। ফসল তোলা যায় রোপণের তিন মাস পরই। শীতের শেষ দিকে ফসল প্রস্তুত হয় বাজারে বিক্রির জন্য। এ বছরও ভালো ফলন হয়েছে।

কেজিপ্রতি ৫ থেকে বাজার ভালো হলে ৩০ টাকায় পাইকারদের কাছে বিক্রি করা হলেও বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৬ টাকা কেজি দরে। একগন্ডা জমিতে কুমড়া চাষে খরচ হয় ৭-৮ হাজার টাকা। ঢাকার কারওয়ান বাজার, মিরপুরসহ বিভিন্ন বাজারে এসব কুমড়া পাইকাররা বিক্রি করেন। এছাড়া জেলার ছয়টি উপজেলা ও আশপাশের জেলায়ও এসব কুমড়া বিক্রি হয়।

শ্রীধরপুর এলাকার চাষি বার্শেদ আলী বলেন, ‘৩৫ বছর ধরে বিলে চাষ করি কুমড়া। কেজি অনুযায়ী ২০০ থেকে ৫ হাজার টাকাও বিক্রি হয়। খেতে খুব স্বাদ তাই মানুষ নিতে আহে বিভিন্ন জায়গা থেকে। আইলে কি ওইবো। এখনতো দাম পাইতাছি না। একপাখি (৩৫ শতাংশ) জমিতে কুমড়া চাষে খরচ হয় ১৫ হাজার টাকা। বর্তমানে বিক্রি কইরা ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা উঠবো। এই কয় টাকায় তিন মাস খাটনিতে কি লাভ থাকে।’

গাদিরঘাট এলাকার অপর কৃষক মো. জনি বলেন, ‘এ বছর ১৫ থেকে ২০ দিন দেরিতে উঠেছে ফসল। বাজারে বিক্রি হইতাছে। তবে একবারে দাম কম। বাজার অনুযায়ী আমরা দাম পাই। এখন পাইকারদের কাছে কেজিপ্রতি ৬ টাকায় বিক্রি করতে হয়।

আরেক কৃষক মনির হোসেন বলেন, ফসলের ফলন হয়েছে অনেক ভালো। ৮জন শ্রমিক লাগে জমির ২০ হাজার টাকার কুমড়া তুলতে। ৪ হাজার টাকা খরচ হয়। আমাদের ভালো লাভ হতো যদি পাইকারদের কাছে কেজিতে ১০ থেকে ১২ টাকা বিক্রি করতে পারতাম।

এ ব্যাপারে পাইকার লিটন শেখ বলেন, ৬টাকায় কুমড়া কিনে নিয়ে ঢাকার বাজারে ১২টাকায় বিক্রি করছি। এক গাড়ি কুমড়া নিতে গাড়ি ভাড়া দিতে হয় ৭হাজার টাকা। ২শর মত কুমড়া নিতে পারি ৪ টনে গাড়িতে।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শান্তনা রাণী জানান, এ বছর প্রায় ১৯০হেক্টর জমিতে কুমড়া আবাদ হয়েছে। প্রতিবছর জানুয়ারি মাসের শেষ ও ফেব্রুয়ারির শুরুতেই কুমড়া উত্তোলন শেষ হলেও এ বছর এখনো কুমড়া উত্তোলন শেষ হয়নি। উত্তোলন বিলম্ব হওয়ায় বাজারে কিছুটা কম দাম পেয়ে থাকতে পারে।

বিশাল আকৃতির কুমড়া ফলনের রহস্য:
কৃষি অফিসের সূত্রে মতে, প্রতিবছর বর্ষার পর বিলের জমিতে কুমড়রা আবাদ হয়। চারা রোপণের ৩ মাসেই ফসল উৎপাদনে সময় লাগে মাস। বিলের কুমড়ার জাত একবারেই স্থানীয় স্বতন্ত্র। অন্য কোনো জমিতে এলাকার কুমড়ার বীজ রোপণ করলেও এমন স্বাদ ও বিশাল আকৃতির হয় না।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শান্তনা রাণী বলেন, বিশেষ ভৌগলিক কারণে এ বিলের কুমড়ার আকৃতি এতো বিশাল হয়ে থাকে। আমি অন্য কোন জেলায় এতবড় কুমড়া দেখিনি। মূলত বর্ষা মৌসুমে দীঘদিন বিলের জমি পানিতে নিমজ্জিত থাকে। এসময় পানিতে জলীয় উদ্ভিদ জন্ম নেয়। পানি নেমে গেলে এসব উদ্ভিদ বিলের মাটিতে পঁচে প্রাকৃতিক সার হিসাবে কাজ করে। যা মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। এতে ফসল ভালো ফলন হয়।

৩মণ ওজনের কুমড়া!
এদিকে এ বছর বিলে সবচেয়ে বিশাল আকৃতির ১২১ কেজি (৩মণ ১ কেজি) ওজনের কুমড়া উত্তোলন করা হয়ছে গাদিঘাট এলাকার গনি শেখের জমি থেকে। কুমড়াটি গাদিঘাট এলাকায় জমি থেকে উত্তোলন করা হয়। উত্তোলনের দিনই কুমড়াটি বিলে ঘুরতে আসা এক ব্যক্তির কাছে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছে সে। গনি মিয়ার ভাগিনা কৃষক বাবু জানান, এইবার দেখা বিলের সবচেয়ে বড় আকৃতির কুমড়া এটি। জমি থেকে ৪জন মিলে বস্তায় ভরে বাসে জুলিয়ে কুমড়াটি বাজারে নিয়ে আসতে হয়েছে। তিনি আরো বলেন, তবে এর আগেও এর থেকে বড় কুমড়া দেখেছি। ৪ থেকে ৫বছর আগে একবার ৪ মণ ওজনের কুমড়া বাজারে তোলা হয়েছিলো।

বেড়েছে হাইব্রিড জাতের কুমড়া আবাদ:
এদিকে আড়িয়ল বিলে স্থানীয় জাতের পাশাপাশি ক্রমাগত বেড়েই চলছে হাইব্রিড কুমড়া চাষ। তবে সেসব কুমড়া স্বাদ ভালো হলেও আকৃতিতে অনেকটাই ছোট। ২থেকে ৭কেজি হয়ে থাকে হাইব্রিড জাতের কুমড়া।

হাইব্রিড কুমড়া চাষি শ্রীধরপুর এলাকার খন্দকার আবুল বারী জানান, দেশি কুমড়ার আকৃতি বড় হলেও একটি জমি থেকে এক মৌসুমে ২দফার বেশি উত্তোলন করা যায় না কিন্তু হাইব্রিড তিনবারও করা যায়। বাজারে চাহিদা আছে তাই এই কুমড়া রোপণ করি। একেকটি কুমড়া ৫০-১০০টাকায় বিক্রি হয়। লাভ ভালো হওয়ায় অনেক চাষিই হাইব্রিড চাষ করছে।

আরেক চাষি ইসমাইল মিয়া বলেন, দেশি কুমড়াই সব সময় রোপণ করি , তবে কয়েক বছর যাবত দেশির পাশাপাশি হাইব্রিডও চাষ শুরু করেছি।

এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ন বেআইনী এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সারা/প্রতিদিনের পোস্ট