ঢাকা , শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসে মৌলভীবাজারে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত দেশের নির্বাচন নির্বাসনে চলে গেছে; নাসের রহমান বাংলাদেশ উদাচী শিল্পীগোষ্ঠী বেলাব থানা শাখার আয়োজনে বাংলা নববর্ষ পালিত ওয়েবসাইট তৈরিতে ৫০ শতাংশ ছাড় দিচ্ছে খন্দকার আইটি বেড়াতে এসে প্রবাসে ফেরা হলো না ফাহমিদার পর্যটন নগরী শ্রীমঙ্গলে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত বাসকপ নবীনগর শাখার উদ্যোগে আলোচনাসভা ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত মনোহরদীতে মৃত ব্যক্তিদের মাগফেরাত কামনায় দোয়া ও ইফতার মাহফিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রয়াত সাংবাদিকদের স্বরণে আলোচনা সভা, ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হাল্টপ্রাইজ বোস্টন সামিটে যাবে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়

চরাঞ্চলের বাসিন্দারা গবাদিপশু পালন করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিদিনের পোস্ট.কম
  • প্রকাশের সময় : ০১:৪৮:৫৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • / ২৭৯ বার পড়া হয়েছে

 কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি || চরাঞ্চলের বাসিন্দারা গবাদিপশু পালন করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন।

কুড়িগ্রামে প্রায় সাড়ে চার শতাধিক চরাঞ্চল রয়েছে। অধিকাংশ মানুষ এসব চরের দরিদ্র। তাদের জীবনযাত্রার মানও নিম্ন। তাছাড়া প্রতি বছর বন্যা, খরা ও নদীভাঙনসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে মোকাবিলা করে তাদের।

জানা গেছে, এসব চরের বাসিন্দাদের কৃষির পাশাপাশি আয়ের অন্যতম উৎস হচ্ছে গবাদিপশু পালন। গরু-ছাগল পালন করে বাড়তি আয় করছেন তারা। গবাদিপশু পালনের ফলে দূর হচ্ছে পরিবারের অভাব-অনটন। তারা বলছেন, বালু মাটিতে বিভিন্ন ফসল আবাদ করে মিটছে না তাদের প্রয়োজনীয় চাহিদা। তাই গবাদিপশু পালনই হয়ে উঠছে তাদের আসা-ভরসা।

কুড়িগ্রাম প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৯ উপজেলায় ৯ লাখ ৩১ হাজার ৪৫২টি গরু রয়েছে। এর মধ্যে দেশি জাতের গাভি ২ লাখ ৭৮ হাজার ৭৮৬টি, সংকর জাতের গাভি ৫০ হাজার ১২৪টি, দেশি জাতের বকনা ১ লাখ ৪৪ হাজার ৭৯৮টি, সংকর জাতের বকনা ৩৯ হাজার ৮৫৭টি, দেশি জাতের ষাঁড় ও বলদ ১ লাখ ৭৯ হাজার ৮৩২টি, সংকর জাতের ষাঁড় ও বলদ ৫৫ হাজার ৩৯৬টি, দেশি জাতের বাছুর ১ লাখ ৪৬ হাজার ৯৩৬টি, সংকর জাতের বাছুর ৩৫ হাজার ৭২৩টি। এছাড়া মহিষ রয়েছে ৯ হাজার ৫২৭টি, ছাগল ৬ লাখ ১২ হাজার ৬২টি এবং ভেড়া রয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার ৮৩১টি।

জানা গেছে, জেলার ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার, ফুলকুমার, জিঞ্জিরামসহ ছোট বড় ১৬টি নদ-নদীর অববাহিকায় রয়েছে প্রায় সাড়ে ৪ শতাধিক চরাঞ্চল। এসব চরাঞ্চলে বসবাস করছেন প্রায় ৫ লক্ষাধিক মানুষ। চরাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষদের একমাত্র পেশা কৃষি। কিন্তু প্রতি বছর বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয় চরাঞ্চলগুলোতে।

তাছাড়া প্রতি বছর নদ-নদীর ভাঙনে ভিটে-বাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয় শত শত পরিবার। এই পরিস্থিতিতে চরাঞ্চলের জমিতে ধান, কাউন, বাদাম, চিনাসহ শুধু মৌসুমি ফসল চাষ করে সংসার চলছে না তাদের। তাই নিজেদের টিকিয়ে রাখতে গবাদিপশু পালনই ভরসা হয়ে উঠেছে এখানকার বাসিন্দাদের।

সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের মাঝের চর এলাকার মানিক মতি বলেন, আমরা চরে থাকি। আমাদের চারদিকে নদী ও ভাঙন। এখানে আবাদ বসত হয় না। যেটুকু আবাদ হয় তা তো বন্যায় শেষ করে দেয়। আমরা অন্য এলাকা থেকে গরু (আদি) বর্গা আনি। পালন করার পর একটা বাছুর হলে সেটা কিছু দিন লালন পালন করে বিক্রি করে ভাগ করে নিই। বর্তমানে আমার বাড়িতে চারটি গরু আছে। বছরে দেখা যায় ২০-২৫ হাজার টাকা আসে গরু বিক্রি থেকে।

ওই এলাকার রহিম মিয়া বলেন, আমাদের এখানে কোনো কাজ-কর্ম নেই। গরু বর্গা এনে এখানকার খোলা মাঠে পালন করি। গরু পালন করে যে আয় হয়, তা দিয়ে সংসার ভালোই চলে। আমাদের এখানে কম-বেশি প্রতি বাড়িতে গরু আছে। সবাই গরু পালন করে।

কৃষক আবুল কাশেম বলেন, আমাদের চরে কৃষি আবাদের পাশাপাশি গরু পালন করি। গরু দিয়ে যে লাভ হয় তা দিয়ে জীবন-যাপন করি। আমরা চরের লোক দুর্যোগের সঙ্গে সব সময় মোকাবিলা করেই বেঁচে থাকি। বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি হয় অনেক। বাইরে গিয়ে টুকটাক কাজ করে আনি, আর গরু পালন করে ভালোই চলি।

সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল গফুর বলেন, আমার যাত্রাপুর ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার ও গঙ্গাধরসহ চারটি নদী রয়েছে। এসব নদ-নদীর অববাহিকায় চর দ্বীপসহ প্রায় ১৬টি চর রয়েছে। এখানে প্রায় তিন হাজার পরিবারের বসবাস। দেখা যায় তাদের স্বামী-সন্তান বাইরে কাজ করে আর বাড়িতে নারীরা গরু পালন করে অনেক লাভবান হচ্ছে। বর্তমানে তাদের আয়ের উৎস হচ্ছে গরু পালন।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. ইউনুস আলী বলেন, কুড়িগ্রাম জেলার চরাঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র। তাদের জীবনযাত্রার মানও নিম্নমানের। জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে তারা গবাদিপশু পালনের ওপর নির্ভর করে। চরাঞ্চলের কাছে ঘাসের অভাব হয় না। গরু-ছাগল মাঠে ছেড়ে দিয়ে লালন-পালন করেন তারা। এতে করে তাদের খাদ্য খরচ লাগে না, আবার গবাদিপশু সুস্থ থাকে। আমাদের বিভাগ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত আছে।

এই নিউজটি শেয়ার করুন

x

চরাঞ্চলের বাসিন্দারা গবাদিপশু পালন করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন

প্রকাশের সময় : ০১:৪৮:৫৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

 কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি || চরাঞ্চলের বাসিন্দারা গবাদিপশু পালন করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন।

কুড়িগ্রামে প্রায় সাড়ে চার শতাধিক চরাঞ্চল রয়েছে। অধিকাংশ মানুষ এসব চরের দরিদ্র। তাদের জীবনযাত্রার মানও নিম্ন। তাছাড়া প্রতি বছর বন্যা, খরা ও নদীভাঙনসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে মোকাবিলা করে তাদের।

জানা গেছে, এসব চরের বাসিন্দাদের কৃষির পাশাপাশি আয়ের অন্যতম উৎস হচ্ছে গবাদিপশু পালন। গরু-ছাগল পালন করে বাড়তি আয় করছেন তারা। গবাদিপশু পালনের ফলে দূর হচ্ছে পরিবারের অভাব-অনটন। তারা বলছেন, বালু মাটিতে বিভিন্ন ফসল আবাদ করে মিটছে না তাদের প্রয়োজনীয় চাহিদা। তাই গবাদিপশু পালনই হয়ে উঠছে তাদের আসা-ভরসা।

কুড়িগ্রাম প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৯ উপজেলায় ৯ লাখ ৩১ হাজার ৪৫২টি গরু রয়েছে। এর মধ্যে দেশি জাতের গাভি ২ লাখ ৭৮ হাজার ৭৮৬টি, সংকর জাতের গাভি ৫০ হাজার ১২৪টি, দেশি জাতের বকনা ১ লাখ ৪৪ হাজার ৭৯৮টি, সংকর জাতের বকনা ৩৯ হাজার ৮৫৭টি, দেশি জাতের ষাঁড় ও বলদ ১ লাখ ৭৯ হাজার ৮৩২টি, সংকর জাতের ষাঁড় ও বলদ ৫৫ হাজার ৩৯৬টি, দেশি জাতের বাছুর ১ লাখ ৪৬ হাজার ৯৩৬টি, সংকর জাতের বাছুর ৩৫ হাজার ৭২৩টি। এছাড়া মহিষ রয়েছে ৯ হাজার ৫২৭টি, ছাগল ৬ লাখ ১২ হাজার ৬২টি এবং ভেড়া রয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার ৮৩১টি।

জানা গেছে, জেলার ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার, ফুলকুমার, জিঞ্জিরামসহ ছোট বড় ১৬টি নদ-নদীর অববাহিকায় রয়েছে প্রায় সাড়ে ৪ শতাধিক চরাঞ্চল। এসব চরাঞ্চলে বসবাস করছেন প্রায় ৫ লক্ষাধিক মানুষ। চরাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষদের একমাত্র পেশা কৃষি। কিন্তু প্রতি বছর বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয় চরাঞ্চলগুলোতে।

তাছাড়া প্রতি বছর নদ-নদীর ভাঙনে ভিটে-বাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয় শত শত পরিবার। এই পরিস্থিতিতে চরাঞ্চলের জমিতে ধান, কাউন, বাদাম, চিনাসহ শুধু মৌসুমি ফসল চাষ করে সংসার চলছে না তাদের। তাই নিজেদের টিকিয়ে রাখতে গবাদিপশু পালনই ভরসা হয়ে উঠেছে এখানকার বাসিন্দাদের।

সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের মাঝের চর এলাকার মানিক মতি বলেন, আমরা চরে থাকি। আমাদের চারদিকে নদী ও ভাঙন। এখানে আবাদ বসত হয় না। যেটুকু আবাদ হয় তা তো বন্যায় শেষ করে দেয়। আমরা অন্য এলাকা থেকে গরু (আদি) বর্গা আনি। পালন করার পর একটা বাছুর হলে সেটা কিছু দিন লালন পালন করে বিক্রি করে ভাগ করে নিই। বর্তমানে আমার বাড়িতে চারটি গরু আছে। বছরে দেখা যায় ২০-২৫ হাজার টাকা আসে গরু বিক্রি থেকে।

ওই এলাকার রহিম মিয়া বলেন, আমাদের এখানে কোনো কাজ-কর্ম নেই। গরু বর্গা এনে এখানকার খোলা মাঠে পালন করি। গরু পালন করে যে আয় হয়, তা দিয়ে সংসার ভালোই চলে। আমাদের এখানে কম-বেশি প্রতি বাড়িতে গরু আছে। সবাই গরু পালন করে।

কৃষক আবুল কাশেম বলেন, আমাদের চরে কৃষি আবাদের পাশাপাশি গরু পালন করি। গরু দিয়ে যে লাভ হয় তা দিয়ে জীবন-যাপন করি। আমরা চরের লোক দুর্যোগের সঙ্গে সব সময় মোকাবিলা করেই বেঁচে থাকি। বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি হয় অনেক। বাইরে গিয়ে টুকটাক কাজ করে আনি, আর গরু পালন করে ভালোই চলি।

সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল গফুর বলেন, আমার যাত্রাপুর ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার ও গঙ্গাধরসহ চারটি নদী রয়েছে। এসব নদ-নদীর অববাহিকায় চর দ্বীপসহ প্রায় ১৬টি চর রয়েছে। এখানে প্রায় তিন হাজার পরিবারের বসবাস। দেখা যায় তাদের স্বামী-সন্তান বাইরে কাজ করে আর বাড়িতে নারীরা গরু পালন করে অনেক লাভবান হচ্ছে। বর্তমানে তাদের আয়ের উৎস হচ্ছে গরু পালন।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. ইউনুস আলী বলেন, কুড়িগ্রাম জেলার চরাঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র। তাদের জীবনযাত্রার মানও নিম্নমানের। জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে তারা গবাদিপশু পালনের ওপর নির্ভর করে। চরাঞ্চলের কাছে ঘাসের অভাব হয় না। গরু-ছাগল মাঠে ছেড়ে দিয়ে লালন-পালন করেন তারা। এতে করে তাদের খাদ্য খরচ লাগে না, আবার গবাদিপশু সুস্থ থাকে। আমাদের বিভাগ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত আছে।