ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

“আধা ঘণ্টার দুধের বাজার: দিনে বিক্রি আড়াই লাখ টাকা”

প্রতিনিধির নাম
  • প্রকাশের সময় : ০৮:২৮:২৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ অক্টোবর ২০২২
  • / ৪৪৮ বার পড়া হয়েছে

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি।। “আধা ঘণ্টার দুধের বাজার: দিনে বিক্রি আড়াই লাখ টাকা”।

মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার সিংজুরি বাজার। বাজারের স্থায়ীত্ব মাত্র আধা ঘণ্টা। তবে কোনো রকমারি পণ্যের জন্য নয়, গাভির দুধের জন্য বিখ্যাত এ বাজার। এ জনপদের প্রায় ৮০ ভাগ মানুষই গাভি পালনের সঙ্গে জড়িত। তাদের আয়ের বড় একটা অংশ আসে এ দুধ বিক্রি করে। এতে করে স্বাবলম্বী হয়েছেন অনেকেই।

সকাল ৮টার দিকে বাজারে দুধ নিয়ে ছুটে আসেন স্থানীয় দুগ্ধ খামারিরা। তবে ওই বাজারে আরো আগে থেকেই অপেক্ষা করছেন ক্রেতারা। এভাবেই ৪৫ বছর ধরে দুধ বেচাকেনা চলে সিংজুরি বাজারে। প্রতিদিন বেচাকেনা হয় প্রায় ১০০ মণ দুধ। ভেজালমুক্ত ও যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো থাকায় বিভিন্ন এলাকা থেকে এই বাজারে দুধ কিনতে আসেন ঘোষেরা।

বাজারে দুধ নিয়ে আসা মাত্রই দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ চোখে ও হাত দিয়ে নেড়েই মান যাচাই করে নেন ক্রেতারা। সে অনুযায়ী চলে দরদাম। মানভেদে প্রতি কেজি বিক্রি হয় ৪৫-৬০ টাকায়। এ বাজারে প্রতিদিন প্রায় আড়াই লাখ টাকার এবং মাসে প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ লাখ টাকার দুধ বিক্রি হয়ে থাকে।

সিংজুরি ইউপির কামারজাগী গ্রামের রিপন মিয়া। পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে পুরো দস্তর একজন গরুর খামারি। তার খামারে ১০টি গরুর মধ্যেই ৫টি গাভি। প্রতিদিন ৩০-৩২ লিটারের মত দুধ বিক্রি করেন তিনি। দাম ভালো থাকলে ওই দুধ বিক্রি আয় করেন ১৭-১৮শ টাকা।

ওই গ্রামের সোহেল হোসেন বলেন, আমার বিদেশি জাতের ৪টি গাভি আছে। প্রতিদিন প্রায় ২৩-২৫ লিটার দুধ পাই। এ দুধ বিক্রি করি গড়ে ১৪-১৫শ টাকায়। প্রতিদিন প্রায় ৭ থেকে সাড়ে ৭শ টাকার ভুষি কিনতে হয়। ভুষির দাম বাড়লেও দুধের দাম সে তুলনায় বাড়েনি।

বাজারে আসা একাধিক বিক্রেতার অভিযোগ, দেশে সব তরল পণ্যই লিটার মাপে বিক্রি করা হয়। আমাদের এই বাজারে ২ বছর আগেও লিটারে বিক্রি হতো। কিন্তু ঘোষেরা এখন লিটারে না কিনে কেজিতে কিনছেন। ১ লিটারে হয় ৯৫০ গ্রাম। আর কেজি মাপে কেনায় ৫০ গ্রাম করে বেশি নিচ্ছেন তারা।

সুবির ঘোষ বলেন, আমার মত প্রায় ১৫-২০ জন ঘোষ এ বাজারে আসেন। যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় এ বাজারে এসে দুধ কিনতে স্বচ্ছন্দ বোধ করি। এছাড়া এখানকার দুধের ভালো মানের ছানা হয়।

ঘিওর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হামিদুর রহমান বলেন, আমরা কৃষি ও কৃষকের পক্ষে। যেহেতু ওই ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ এ পেশার সঙ্গে জড়িত, তাই তাদের কথা বিবেচনা করে পুরাতন ইউপি ভবনটি অপসারণ করে দুধের বাজারের জন্য আলাদা করে আধুনিক শেড নির্মাণ করা হবে।

আর কেজিতে দুধ বিক্রি করলে খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা বরাবরই একটা কথা বলি সেটা হচ্ছে আমাদের কাছে কৃষকের স্বার্থটাই বড়। কৃষকরা যেন তাদের দুধের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত না হয়, সেজন্য উপজেলা প্রশাসন তাদের পাশে থাকবে। খুব শিগগিরই বিক্রেতাদের সঙ্গে বসে বিষয়টা সমাধান করা হবে।

এই নিউজটি শেয়ার করুন

x

“আধা ঘণ্টার দুধের বাজার: দিনে বিক্রি আড়াই লাখ টাকা”

প্রকাশের সময় : ০৮:২৮:২৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ অক্টোবর ২০২২

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি।। “আধা ঘণ্টার দুধের বাজার: দিনে বিক্রি আড়াই লাখ টাকা”।

মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার সিংজুরি বাজার। বাজারের স্থায়ীত্ব মাত্র আধা ঘণ্টা। তবে কোনো রকমারি পণ্যের জন্য নয়, গাভির দুধের জন্য বিখ্যাত এ বাজার। এ জনপদের প্রায় ৮০ ভাগ মানুষই গাভি পালনের সঙ্গে জড়িত। তাদের আয়ের বড় একটা অংশ আসে এ দুধ বিক্রি করে। এতে করে স্বাবলম্বী হয়েছেন অনেকেই।

সকাল ৮টার দিকে বাজারে দুধ নিয়ে ছুটে আসেন স্থানীয় দুগ্ধ খামারিরা। তবে ওই বাজারে আরো আগে থেকেই অপেক্ষা করছেন ক্রেতারা। এভাবেই ৪৫ বছর ধরে দুধ বেচাকেনা চলে সিংজুরি বাজারে। প্রতিদিন বেচাকেনা হয় প্রায় ১০০ মণ দুধ। ভেজালমুক্ত ও যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো থাকায় বিভিন্ন এলাকা থেকে এই বাজারে দুধ কিনতে আসেন ঘোষেরা।

বাজারে দুধ নিয়ে আসা মাত্রই দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ চোখে ও হাত দিয়ে নেড়েই মান যাচাই করে নেন ক্রেতারা। সে অনুযায়ী চলে দরদাম। মানভেদে প্রতি কেজি বিক্রি হয় ৪৫-৬০ টাকায়। এ বাজারে প্রতিদিন প্রায় আড়াই লাখ টাকার এবং মাসে প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ লাখ টাকার দুধ বিক্রি হয়ে থাকে।

সিংজুরি ইউপির কামারজাগী গ্রামের রিপন মিয়া। পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে পুরো দস্তর একজন গরুর খামারি। তার খামারে ১০টি গরুর মধ্যেই ৫টি গাভি। প্রতিদিন ৩০-৩২ লিটারের মত দুধ বিক্রি করেন তিনি। দাম ভালো থাকলে ওই দুধ বিক্রি আয় করেন ১৭-১৮শ টাকা।

ওই গ্রামের সোহেল হোসেন বলেন, আমার বিদেশি জাতের ৪টি গাভি আছে। প্রতিদিন প্রায় ২৩-২৫ লিটার দুধ পাই। এ দুধ বিক্রি করি গড়ে ১৪-১৫শ টাকায়। প্রতিদিন প্রায় ৭ থেকে সাড়ে ৭শ টাকার ভুষি কিনতে হয়। ভুষির দাম বাড়লেও দুধের দাম সে তুলনায় বাড়েনি।

বাজারে আসা একাধিক বিক্রেতার অভিযোগ, দেশে সব তরল পণ্যই লিটার মাপে বিক্রি করা হয়। আমাদের এই বাজারে ২ বছর আগেও লিটারে বিক্রি হতো। কিন্তু ঘোষেরা এখন লিটারে না কিনে কেজিতে কিনছেন। ১ লিটারে হয় ৯৫০ গ্রাম। আর কেজি মাপে কেনায় ৫০ গ্রাম করে বেশি নিচ্ছেন তারা।

সুবির ঘোষ বলেন, আমার মত প্রায় ১৫-২০ জন ঘোষ এ বাজারে আসেন। যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় এ বাজারে এসে দুধ কিনতে স্বচ্ছন্দ বোধ করি। এছাড়া এখানকার দুধের ভালো মানের ছানা হয়।

ঘিওর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হামিদুর রহমান বলেন, আমরা কৃষি ও কৃষকের পক্ষে। যেহেতু ওই ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ এ পেশার সঙ্গে জড়িত, তাই তাদের কথা বিবেচনা করে পুরাতন ইউপি ভবনটি অপসারণ করে দুধের বাজারের জন্য আলাদা করে আধুনিক শেড নির্মাণ করা হবে।

আর কেজিতে দুধ বিক্রি করলে খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা বরাবরই একটা কথা বলি সেটা হচ্ছে আমাদের কাছে কৃষকের স্বার্থটাই বড়। কৃষকরা যেন তাদের দুধের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত না হয়, সেজন্য উপজেলা প্রশাসন তাদের পাশে থাকবে। খুব শিগগিরই বিক্রেতাদের সঙ্গে বসে বিষয়টা সমাধান করা হবে।