ঢাকা , বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
‘অনৈতিক মেলামেশার পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেন আপন ভাই-বোন’ পাঁচ বছরের সাজার অভিযোগে চেয়ারম্যানের প্রার্থীতা বাতিল নরসিংদীতে হিটস্ট্রোকে মসজিদের সামনে মুক্তিযোদ্ধার প্রাণ গেল পাটগ্রাম উপজেলার মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদে জনপ্রিয়তায় এগিয়ে রেজওয়ানা পারভীন (সুমি) ৬০ বছরের বৃদ্ধের দ্বারা ৭ বছরের শিশুর ধর্ষণ সিলেট বিভাগের শ্রেষ্ঠ এস আই সুব্রত দাস ভারতের লোকসভার বিরোধী দলের নেতা অধীর চৌধুরী বহরমপুর কেন্দ্রের মনোনয়ন দাখিল তাপপ্রবাহে বেশি ঝুঁকিতে শিশুরা : ইউনিসেফ নরসিংদীতে বৃষ্টির জন্য নামাজ ও দুহাত তুলে ফরিয়াদ জানিয়েছে হাজারো মুসল্লি শায়েস্তাগঞ্জে ১৫শ কৃষকের মাঝে সার ও বীজ বিতরণ অনুষ্ঠিত

ইজারার বাইরে বালু উত্তোলনে ভাঙছে বেড়িবাঁধ, আতঙ্কে তীরের মানুষ

নিজস্ব প্রতিনিধি
  • প্রকাশের সময় : ০৮:১৬:৫৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ এপ্রিল ২০২৪
  • / ৭৮ বার পড়া হয়েছে

ছবি: প্রতিদিনের পোস্ট

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার মেঘনা নদীতে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই চলছে অবাধে বালু উত্তোলন। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে ৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বেড়িবাঁধ। ইজারার শর্ত অনুযায়ী ২০টি ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করার কথা থাকলেও সেখানে প্রায় শতাধিক ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করায় বেড়িবাঁধের ৫০ ফুট এলাকা জুড়ে হঠাৎ ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলোর মানুষজন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বড়িকান্দি ইউনিয়নের নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলো নদী গর্ভে বিলীন হওয়া থেকে রক্ষায় ২০১৮ সালে সোনাবালুয়া ঘাট থেকে এমপি টিলা পর্যন্ত ৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে পাউবো।

মেঘনার জাফরাবাদ মৌজার নতুনচর এলাকায় ৩২ একর দীর্ঘ একটি সুনির্দিষ্ট সীমানায় বালুমহাল ইজারা দেয় জেলা প্রশাসন। জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন শোভনের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান মুন্সী এন্টারপ্রাইজ বার্ষিক ৯ কোটি টাকার বিনিময়ে এই বালুমহালের ইজারা পায়। ইজারার শর্ত ভঙ্গ ও সীমানা অতিক্রম করে দিনে ও রাতে বালু উত্তোলন করছেন মুন্সী এন্টারপ্রাইজ নামের এই প্রতিষ্ঠান। এতে করে নদীর তীরবর্তী সোনাবালুয়া ঘাট, এমপি টিলা, নুরজাহানপুর, ঈদগা মাঠ ও কবরস্থানসহ নদী পাড়ের গ্রামগুলো নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এ বিষয়ে বড়িকান্দি ইউনিয়নের মুক্তারামপুর গ্রামের হুমায়ুন মিয়া বলেন, সীমানার বাইরে এসে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করায় বেড়িবাঁধ ভেঙে পরেছে। হেরাই ভাঙে আবার হেরাই ভরে। প্রশাসনের লোকদের ম্যানেজ করে হেরা বালু উত্তোলন করেন। এভাবে চলতে থাকলে নদীর পাড়ের গ্রামগুলো বিলীন হয়ে যাবে।

এ বিষয়ে বালুমহালের কেয়ারটেকার ছাদেক মিয়া জানান, গত শনিবার সন্ধ্যায় হঠাৎ বেড়িবাঁধ ভেঙে নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। বালু মহালের পক্ষ থেকে ৬৫ ট্রলি কংক্রিট দিয়ে কিছু অংশ ভরাট করে দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে নবীনগর উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক ও জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য অধ্যাপক নুরুন্নাহার বেগম বলেন, এই বালুমহাল এখন একটি মরণফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারের নিয়ম নীতি ভঙ্গ করে অবাধে বালু উত্তোলনের ফলে নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলো ভাঙ্গনের কবলে পড়তে পারে। এতে করে আবাদি জমি, বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হতে পারে তীরবর্তী গ্রামের মানুষ গুলো। যার একটি আলামত বেড়িবাঁধ ভাঙ্গন।

এ বিষয়ে ইজারাদার শাহাদাত হোসেন শোভন জানান, বালু উত্তোলনে আমরা সচেতন আছি। নিয়ম বহীভূত কোন কাজ করা হচ্ছে না। তবে ড্রেজারের সংখ্যার সত্যতা স্বীকার করে তিনি বলেন, সর্বোচ্চ ২০টি ড্রেজার কথাটা সত্যি না। মৌখিকভাবে ৩০ থেকে ৩৫টি ড্রেজার চালানোর কথা রয়েছে। তবে ইজারায় সংখ্যা নির্দিষ্ট করে কোন উল্লেখ নেই।

নবীনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) তানভীর ফরহাদ শামীম বলেন, বালুমহাল এলাকায় শর্তের বাইরে যেয়ে বালু উত্তোলনের কোন সুযোগ নেই। আগেও সীমানার বাইরে ড্রেজার মেশিন পাওয়া যাওয়ায় ইজারাদারের ৯ জন লোককে জেল জরিমানা করেছি। আজকে আবার এই বালু মহালে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ২০টি ড্রেজারের বেশি পাওয়ায় ইজারাদারের প্রতিনিধিকে ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা করেছি। এসময় চরমানিকনগর থেকে মাটি কাটার সময় ৩ জনকে আটক করে তাদেরকে ৬ মাসের জেল দেওয়া হয়েছে। জনস্বার্থে এই ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

ট্যাগস :

এই নিউজটি শেয়ার করুন

x

ইজারার বাইরে বালু উত্তোলনে ভাঙছে বেড়িবাঁধ, আতঙ্কে তীরের মানুষ

প্রকাশের সময় : ০৮:১৬:৫৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ এপ্রিল ২০২৪

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার মেঘনা নদীতে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই চলছে অবাধে বালু উত্তোলন। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে ৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বেড়িবাঁধ। ইজারার শর্ত অনুযায়ী ২০টি ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করার কথা থাকলেও সেখানে প্রায় শতাধিক ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করায় বেড়িবাঁধের ৫০ ফুট এলাকা জুড়ে হঠাৎ ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলোর মানুষজন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বড়িকান্দি ইউনিয়নের নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলো নদী গর্ভে বিলীন হওয়া থেকে রক্ষায় ২০১৮ সালে সোনাবালুয়া ঘাট থেকে এমপি টিলা পর্যন্ত ৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে পাউবো।

মেঘনার জাফরাবাদ মৌজার নতুনচর এলাকায় ৩২ একর দীর্ঘ একটি সুনির্দিষ্ট সীমানায় বালুমহাল ইজারা দেয় জেলা প্রশাসন। জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন শোভনের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান মুন্সী এন্টারপ্রাইজ বার্ষিক ৯ কোটি টাকার বিনিময়ে এই বালুমহালের ইজারা পায়। ইজারার শর্ত ভঙ্গ ও সীমানা অতিক্রম করে দিনে ও রাতে বালু উত্তোলন করছেন মুন্সী এন্টারপ্রাইজ নামের এই প্রতিষ্ঠান। এতে করে নদীর তীরবর্তী সোনাবালুয়া ঘাট, এমপি টিলা, নুরজাহানপুর, ঈদগা মাঠ ও কবরস্থানসহ নদী পাড়ের গ্রামগুলো নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এ বিষয়ে বড়িকান্দি ইউনিয়নের মুক্তারামপুর গ্রামের হুমায়ুন মিয়া বলেন, সীমানার বাইরে এসে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করায় বেড়িবাঁধ ভেঙে পরেছে। হেরাই ভাঙে আবার হেরাই ভরে। প্রশাসনের লোকদের ম্যানেজ করে হেরা বালু উত্তোলন করেন। এভাবে চলতে থাকলে নদীর পাড়ের গ্রামগুলো বিলীন হয়ে যাবে।

এ বিষয়ে বালুমহালের কেয়ারটেকার ছাদেক মিয়া জানান, গত শনিবার সন্ধ্যায় হঠাৎ বেড়িবাঁধ ভেঙে নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। বালু মহালের পক্ষ থেকে ৬৫ ট্রলি কংক্রিট দিয়ে কিছু অংশ ভরাট করে দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে নবীনগর উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক ও জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য অধ্যাপক নুরুন্নাহার বেগম বলেন, এই বালুমহাল এখন একটি মরণফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারের নিয়ম নীতি ভঙ্গ করে অবাধে বালু উত্তোলনের ফলে নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলো ভাঙ্গনের কবলে পড়তে পারে। এতে করে আবাদি জমি, বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হতে পারে তীরবর্তী গ্রামের মানুষ গুলো। যার একটি আলামত বেড়িবাঁধ ভাঙ্গন।

এ বিষয়ে ইজারাদার শাহাদাত হোসেন শোভন জানান, বালু উত্তোলনে আমরা সচেতন আছি। নিয়ম বহীভূত কোন কাজ করা হচ্ছে না। তবে ড্রেজারের সংখ্যার সত্যতা স্বীকার করে তিনি বলেন, সর্বোচ্চ ২০টি ড্রেজার কথাটা সত্যি না। মৌখিকভাবে ৩০ থেকে ৩৫টি ড্রেজার চালানোর কথা রয়েছে। তবে ইজারায় সংখ্যা নির্দিষ্ট করে কোন উল্লেখ নেই।

নবীনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) তানভীর ফরহাদ শামীম বলেন, বালুমহাল এলাকায় শর্তের বাইরে যেয়ে বালু উত্তোলনের কোন সুযোগ নেই। আগেও সীমানার বাইরে ড্রেজার মেশিন পাওয়া যাওয়ায় ইজারাদারের ৯ জন লোককে জেল জরিমানা করেছি। আজকে আবার এই বালু মহালে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ২০টি ড্রেজারের বেশি পাওয়ায় ইজারাদারের প্রতিনিধিকে ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা করেছি। এসময় চরমানিকনগর থেকে মাটি কাটার সময় ৩ জনকে আটক করে তাদেরকে ৬ মাসের জেল দেওয়া হয়েছে। জনস্বার্থে এই ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।