ঢাকা , শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতেই আশার আলো​

প্রতিনিধির নাম
  • প্রকাশের সময় : ১২:০৪:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ মার্চ ২০২৩
  • / ১৪৮ বার পড়া হয়েছে

নাসিম আজাদ, প্রতিদিনের পোস্ট: শিক্ষা ছাড়া কোন জাতি উন্নতির চরম স্বর্ণশিখরে পৌঁছাতে পারেনা। তাই শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে ও আলোকিত মানুষ গড়তে নরসিংদীর পলাশে একদম অজপাড়া গাঁয়ে মালিতা নামক স্থানে​ ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠা করেন, আশার আলো বিদ্যানিকেতন নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

কিন্তু এর কার্যক্রম শুরু করা হয় ২০২৩ সালের জানুয়ারীর ১তারিখ থেকে। প্রতিষ্ঠানটিতে ১২জন শিক্ষকসহ রয়েছেন প্রায় ২৫০জন শিক্ষার্থী।​

জানা যায়, আশেপাশে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় এলাকার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পূর্বে হারিদোয়া নদী পাড়ি দিয়ে যেতে হতো ৩কিলোমিটার সাধারচর উচ্চ বিদ্যালয়ে, উত্তরে ৪কিলোমিটার তৌহিদ মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়, ৪কিলোমিটার দক্ষিণে পারুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয় বা ৫কিলোমিটার পশ্চিমে খানেপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে কষ্ট করে যেতে হতো। আর স্কুলগুলো দুরত্ব বেশি হওয়ায় কিছু কিছু শিশু শিক্ষার্থীরা যেতেও চাইতোনা।সবদিক চিন্তা করে মালিতা লোহারকান্দা গ্রামের বিশিষ্ট শিক্ষাণুরাগী আক্তার আলম প্রাথমিক ভাবে ৭০শতাংশ জমি ক্রয় করে এলাকার মানুষের সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠা করেন এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি।
আশার আলো বিদ্যানিকেতনের ৬ষ্ট শ্রেনীর শিক্ষার্থী মরিয়ম তাবাসসুম বলেন, আমাদেরকে পায়ে হেটে কষ্ট করে বহুদূরে যেতে হতো নিজ গ্রামে স্কুলে হওয়ায় আমরা খুব খুশি এখন আর কষ্ট করতে হবেনা।
১ম শ্রেনীর শিক্ষার্থী তাসনিম আলম তুবা বলেন, বিভিন্ন খেলাধুলার সরঞ্জাম থাকায় লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা করতে পারি। শিক্ষকরা আদর করে আমাদের পাঠদান করেন।​
মালিতা গ্রামের বাসিন্দা শিমু আক্তার নামে একজন অবিভাবক বলেন, শিক্ষক মন্ডলী দ্বারা ভালো মানের শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। নতুন বছরে নতুন বইয়ের পাশাপাশি সকল শিক্ষার্থীদের নতুন ইউনিফর্ম দেওয়া হয়েছে। এটি শিক্ষার্থীদের জন্য প্রেরণার উৎস। আমরা চাই বিদ্যালয়টি এগিয়ে যাক আরও বহুদূর।​
বালিয়া চরসিন্দুর দেশবন্ধু সুগার মিল থেকে আসা অপর অবিভাবক সুমী জানান, প্রতিষ্ঠাতা পরিচালনা পরিষদ ও শিক্ষকমন্ডলী সুশিক্ষার মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে অবিরাম পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। স্কুলের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুল ভ্যানের ব্যাবস্থা করেছে। শুনেছি দশম শ্রেণি পর্যন্ত চালু হবে। এটি এলাকার জন্য মহৎ উদ্যোগ।
প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ আবিদা সুলতানা লিমা বলেন, এই এলাকায় শিকার হার আরো বাড়বে। আলোকিত হবে মানুষজন।পাঠদানের পাশাপাশি বিনোদনের ব্যাবস্থাও রয়েছে।আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে শিক্ষার্থীদের ভূমিকা অপরিসীম। তাই যোগ্য নাগরিক হিসেবে তাদের গড়ে তুলতে হবে।​
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা মালিতা লোহারকান্দা গ্রামের বিশিষ্ট শিক্ষাণুরাগী আক্তার আলম বলেন, এলাকার মানুষের কষ্টের কথা চিন্তা করে নরসিংদী-২ (পলাশ) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব ডাঃ আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলীপ মহোদয়ের পরামর্শক্রমে একটি মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে আমি এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেছি।আশার আলো নামকরণ করা হয়েছে কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আবেগ তাড়িত কন্ঠে জানান, আমার একটি প্রতিবন্ধী মেয়ে ছিল যার নাম ছিল আশা। সে নরসিংদীর ভালো একটি স্কুলে তাকে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিল। প্রতিবন্ধী বলে কর্তৃপক্ষ তাকে করনি। অসুস্থ অবস্থায় একদিন সে আমাকে বললো, বাবা তুমি আমাদের গ্রামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করো। যেখান থেকে কোন প্রতিবন্ধীকে ফেরত দেওয়া হবেনা। তারা শিক্ষা গ্রহণ করে তাদের জীবন গড়ে তুলবে। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে ৭০শতাংশ জায়গা থাকলেও কিছুদিনের মধ্যে আরও ৬০শতাংশ জায়গা ক্রয় করবো।আগামী নতুন বছরে অষ্টম ও পরের বছর দশম শ্রেণিতে উন্নীত করবো।ভবিষ্যতে কলেজ করার পরিকল্পনাও রয়েছে। এব্যাপারে এলাকার মানুষ আমাকে সর্বাত্বক করছে।আগামীদিন এই এলাকার মানুষ শিকার আলোয় আলোকিত হবে। একজন প্রতিবন্ধীর মনোবাসনা পূর্ণ হবে,প্রতিষ্ঠানটি আজীবন বেঁচে থাকবে এটিই আমার চাওয়া।
ট্যাগস :

এই নিউজটি শেয়ার করুন

x

শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতেই আশার আলো​

প্রকাশের সময় : ১২:০৪:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ মার্চ ২০২৩

নাসিম আজাদ, প্রতিদিনের পোস্ট: শিক্ষা ছাড়া কোন জাতি উন্নতির চরম স্বর্ণশিখরে পৌঁছাতে পারেনা। তাই শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে ও আলোকিত মানুষ গড়তে নরসিংদীর পলাশে একদম অজপাড়া গাঁয়ে মালিতা নামক স্থানে​ ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠা করেন, আশার আলো বিদ্যানিকেতন নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

কিন্তু এর কার্যক্রম শুরু করা হয় ২০২৩ সালের জানুয়ারীর ১তারিখ থেকে। প্রতিষ্ঠানটিতে ১২জন শিক্ষকসহ রয়েছেন প্রায় ২৫০জন শিক্ষার্থী।​

জানা যায়, আশেপাশে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় এলাকার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পূর্বে হারিদোয়া নদী পাড়ি দিয়ে যেতে হতো ৩কিলোমিটার সাধারচর উচ্চ বিদ্যালয়ে, উত্তরে ৪কিলোমিটার তৌহিদ মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়, ৪কিলোমিটার দক্ষিণে পারুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয় বা ৫কিলোমিটার পশ্চিমে খানেপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে কষ্ট করে যেতে হতো। আর স্কুলগুলো দুরত্ব বেশি হওয়ায় কিছু কিছু শিশু শিক্ষার্থীরা যেতেও চাইতোনা।সবদিক চিন্তা করে মালিতা লোহারকান্দা গ্রামের বিশিষ্ট শিক্ষাণুরাগী আক্তার আলম প্রাথমিক ভাবে ৭০শতাংশ জমি ক্রয় করে এলাকার মানুষের সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠা করেন এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি।
আশার আলো বিদ্যানিকেতনের ৬ষ্ট শ্রেনীর শিক্ষার্থী মরিয়ম তাবাসসুম বলেন, আমাদেরকে পায়ে হেটে কষ্ট করে বহুদূরে যেতে হতো নিজ গ্রামে স্কুলে হওয়ায় আমরা খুব খুশি এখন আর কষ্ট করতে হবেনা।
১ম শ্রেনীর শিক্ষার্থী তাসনিম আলম তুবা বলেন, বিভিন্ন খেলাধুলার সরঞ্জাম থাকায় লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা করতে পারি। শিক্ষকরা আদর করে আমাদের পাঠদান করেন।​
মালিতা গ্রামের বাসিন্দা শিমু আক্তার নামে একজন অবিভাবক বলেন, শিক্ষক মন্ডলী দ্বারা ভালো মানের শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। নতুন বছরে নতুন বইয়ের পাশাপাশি সকল শিক্ষার্থীদের নতুন ইউনিফর্ম দেওয়া হয়েছে। এটি শিক্ষার্থীদের জন্য প্রেরণার উৎস। আমরা চাই বিদ্যালয়টি এগিয়ে যাক আরও বহুদূর।​
বালিয়া চরসিন্দুর দেশবন্ধু সুগার মিল থেকে আসা অপর অবিভাবক সুমী জানান, প্রতিষ্ঠাতা পরিচালনা পরিষদ ও শিক্ষকমন্ডলী সুশিক্ষার মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে অবিরাম পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। স্কুলের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুল ভ্যানের ব্যাবস্থা করেছে। শুনেছি দশম শ্রেণি পর্যন্ত চালু হবে। এটি এলাকার জন্য মহৎ উদ্যোগ।
প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ আবিদা সুলতানা লিমা বলেন, এই এলাকায় শিকার হার আরো বাড়বে। আলোকিত হবে মানুষজন।পাঠদানের পাশাপাশি বিনোদনের ব্যাবস্থাও রয়েছে।আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে শিক্ষার্থীদের ভূমিকা অপরিসীম। তাই যোগ্য নাগরিক হিসেবে তাদের গড়ে তুলতে হবে।​
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা মালিতা লোহারকান্দা গ্রামের বিশিষ্ট শিক্ষাণুরাগী আক্তার আলম বলেন, এলাকার মানুষের কষ্টের কথা চিন্তা করে নরসিংদী-২ (পলাশ) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব ডাঃ আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলীপ মহোদয়ের পরামর্শক্রমে একটি মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে আমি এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেছি।আশার আলো নামকরণ করা হয়েছে কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আবেগ তাড়িত কন্ঠে জানান, আমার একটি প্রতিবন্ধী মেয়ে ছিল যার নাম ছিল আশা। সে নরসিংদীর ভালো একটি স্কুলে তাকে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিল। প্রতিবন্ধী বলে কর্তৃপক্ষ তাকে করনি। অসুস্থ অবস্থায় একদিন সে আমাকে বললো, বাবা তুমি আমাদের গ্রামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করো। যেখান থেকে কোন প্রতিবন্ধীকে ফেরত দেওয়া হবেনা। তারা শিক্ষা গ্রহণ করে তাদের জীবন গড়ে তুলবে। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে ৭০শতাংশ জায়গা থাকলেও কিছুদিনের মধ্যে আরও ৬০শতাংশ জায়গা ক্রয় করবো।আগামী নতুন বছরে অষ্টম ও পরের বছর দশম শ্রেণিতে উন্নীত করবো।ভবিষ্যতে কলেজ করার পরিকল্পনাও রয়েছে। এব্যাপারে এলাকার মানুষ আমাকে সর্বাত্বক করছে।আগামীদিন এই এলাকার মানুষ শিকার আলোয় আলোকিত হবে। একজন প্রতিবন্ধীর মনোবাসনা পূর্ণ হবে,প্রতিষ্ঠানটি আজীবন বেঁচে থাকবে এটিই আমার চাওয়া।